পাতা:ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ - জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২৮৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২৮৪
ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ

 ঐ অদূরে—যে তপ্তধূলার কুজ্ঝটিকায় সমস্ত দেশ আচ্ছন্ন—সেই কুজ্ঝটিকার মধ্য দিয়া আবার যেন এইরূপ কতকগুলি মূর্ত্তি দেখিতে পাইলাম।•••অন্যান্য উপত্যকা—অন্যান্য গণ্ডশৈল আমাদের নেত্রসমক্ষে ক্রমশ উদ্ঘাটিত হইল। সেখানেও এই সকল মূর্ত্তি সারিসারি চলিয়াছে, ইহাদের আর শেষ নাই। সমস্ত আকাশে যেন একপ্রকার ভস্মরাশি বিলম্বিত এবং সূর্য্যের জ্বলন্ত কিরণ সর্বত্রই দীপ্যমান। এই উত্তাপ ও মধুরনাদী ঘণ্টিকার প্রশান্ত নিক্কণ আমার নিদ্রাকর্ষণ করিতেছে; যতই আমরা নীচে নামিতেছি, ততই যেন সমস্তের উপর একটা আবরণ পড়িয়া যাইতেছে; এইরূপ আধ-ঘুমন্ত অবস্থায় আমরা দুলিতে-দুলিতে চলিয়াছি; এই বিরাট্‌ মূর্ত্তিগুলার রূপ একটু-একটু করিয়া অস্পষ্ট হইতে লাগিল;— ক্রমে মন হইতে একেবারেই তিরোহিত হইল।


মাদ্রাজে থিওসফিষ্টদের গৃহে।

 “স্বর্গ বিনা ঈশ্বর, আত্মা বিনা অমরত্ব, প্রার্থনা বিনা চিত্তশুদ্ধি”...

 আমাদের কথাবর্তা যখন থামিয়া গেল, চরম সিদ্ধান্তের আকারে পরিব্যক্ত উপরি-উক্ত বীজমন্ত্রটি, ঘোর নিস্তব্ধতার মধ্যে, বিষাদগম্ভীরস্বরে আমার কর্ণে যেন ক্রমাগত ধ্বনিত হইতে লাগিল।

 গৃহটি নির্জ্জন;—ময়দানের উপর, নদীর ধারে, তালীবন ও অপরিচিত একপ্রকার বৃহৎ-জাতীয় পুষ্পরাশির মধ্যে অবস্থিত, এবং সন্ধ্যার বিষাদ-ছায়ায় আচ্ছন্ন। তখন আমরা গৃহের পুস্তকাগারে ছিলাম। জান্‌লা-শাশির মধ্য দিয়া ঘরটিতে এখনো বেশ আলো আসিতেছিল; অল্পে-অল্পে আলো কমিয়া আসিল; শাশির রঙিন কাচখণ্ডের উপর যে সব স্বচ্ছপ্রভ ক্ষুদ্র চিত্র ছিল, তাহা ক্রমশ বিলীন হইয়া গেল;—সমস্ত মানবীয় ধর্মমতের