পাতা:ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ - জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ত্রিবঙ্কুর-মহারাজের রাজ্যাভিমুখে।
২৫

 রাত্রি হইয়া আসিতেছে; গ্রীষ্মকালের অতি সুন্দর রাত্রি, কিন্তু চন্দ্রহীন। সেই লোকটি ব্রাহ্মণমন্দিরের দীপালোক দেখাইবার জন্য আমাকে শকটে করিয়া লইয়া গেল। এই মন্দিরটি “তৃণবল্লী”-নামক পার্শ্ববর্ত্তী নগরে অবস্থিত। দাক্ষিণাত্যের মন্দিরগুলির মধ্যে ইহা সর্ব্বাপেক্ষা বৃহৎ। শকটের বাহনেরা সহজ দুলকি-চালে চলিতেছে। আমরা রহস্যময় তরুপুঞ্জের মধ্য দিয়া চলিয়াছি; আমাদের মস্তকোপরি শ্যামল পল্লবজাল প্রসারিত; সেই সকল বৃক্ষের শাখাপ্রশাখা হইতে শিকড় বিস্তৃত হইয়া আবার তাহাদের সহিত যেন মিলিবার চেষ্টা করিতেছে। তরঙ্গিত শিকড়- জাল সুদীর্ঘ কেশগুচ্ছের ন্যায় প্রতীয়মান হইতেছে। পল্লবপুঞ্জের উপরে, পল্লবের ফাঁকে-ফাঁকে আকাশের অযুত তারা, এবং নিম্নতলে এমন কি, তৃণভূমির উপরেও—অসংখ্য জোনাকি ঝিক্‌মিক্‌ করিতেছে। গ্রীষ্মপ্রধান দেশে, প্রতি সন্ধ্যায়, আতসবাজির স্ফুলিগবৎ এই কীটগুলি জ্বলিতে থাকে। তারকা ও জোনাকির স্ফুলিঙ্গঙ্গজ্যোতি এরূপ পরস্পরের সহিত মিশিয়া গিয়াছে যে, উহার মধ্যে কোন্‌টি জ্যোতিষ্ক ও কোটি জ্যোতিরিঙ্গণ, তাহা নিরূপণ করা দুষ্কর।

 সিংহলের অবসাদজনক আর্দ্রবায়ু ত্যাগ করিয়া, এইখানে আবার স্বাস্থ্যকর শুষ্কবায়ুর মধ্যে আসিয়া পড়িয়াছি। ফ্রান্সের গ্রীষ্মকালীন সুন্দর রাত্রির মত,এখানে আবার সেইরূপ সুখস্পর্শ অনিল, নিশ্বাসের সহিত গ্রহণ করিতেছি; এবং জুনমাসে ফ্রান্সের পল্লীগ্রামে যেরূপ শুনা যায়, এখানেও সেইরূপ ঝিল্লীসঙ্গীত চারিদিক হইতে শুনিতেছি। কিন্তু এই সকল পথে যে পথিকলোকের সহিত সাক্ষাৎ হইতেছে, তাহারা আমাদের চক্ষে অদ্ভুত; —এই সকল তাম্রমূর্ত্তি পথিকেরা নিঃশব্দে খালি-পায়ে চলিয়াছে। তাহাদের স্কন্ধের উপর মলমলের উত্তরীয়। মধ্যে-মধ্যে, দূর হইতে যখন ঢাক-ঢোলের শব্দ অথবা শানাইযন্ত্রসমুখিত আর্তনাদের আলাপ শুনিতে পাই, তখনি ঠিক বুঝিতে পারি, এটি পৃথিবীর কোন্ বিভাগ; তখনি ইহাকে ভারত বলিয়া,