পাতা:ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ - জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২৯৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২৯২
ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ।

আমার জীবনে একটা নূতন পথ উন্মুক্ত হইবে,—আমার মধুর মরীচিকাগুলি অন্তহিত হইবে।—


গোধূলি-আলোকে জগন্নাথমন্দির।

 ব্রাহ্মণ্যধর্ম্মের পীঠস্থান একটি পুরাতন নগরে, সমস্ত হইতে দূরে, সৈকতভূমি ও বালুকাস্তূপের মধ্যে, বঙ্গোপসাগরের ধারে, জগন্নাথের বিরাট্‌ মন্দির অধিষ্ঠিত।

 ভারতের মধ্যদেশ হইতে যাত্রা করিয়া, সূর্যাস্তসময়ে এইখানে আসিয়া পৌঁছিলাম। আমার গাড়িটা সহসা নিঃশব্দ হইল,—যেন মখ্‌মলের উপর দিয়া চলিতে লাগিল;—আমরা এখন বালুরাশির মধ্যে আসিয়াছি। নিঃশব্দতাদ্বারা জানাইয়া-দিয়া, নীল রেখার আকারে সমুদ্র আমাদের সম্মুখে প্রকাশিত হইল।

 বালুকাস্তূপরাশির উপর, ক্যাক্টস্ (cactus)-ঝোপের ভিতরে, প্রথমে ধীবরদিগের কতকগুলি ইতস্ততোবিক্ষিপ্ত কুটীর। তাহার পরেই জগন্নাথের মন্দির দৃষ্টিপথে পতিত হইল। তালপাতায়-ছাওয়া হাজার-হাজার ধূসরবর্ণ খোড়ো-ঘরের উর্দ্ধে,—রাশি-রাশি কোঠাবাড়ীর মধ্যে, মন্দিরের চূড়াটি সমুত্থিত; বিশেষত এই সামুদ্রিক ভূভাগে, আকাশভেদ করিয়া মন্দিরচূড়া অতি উচ্চে উঠিয়াছে বলিয়া, মন্দিরের এই দৃশ্যটি অতীব অপূর্ব্ব; চতুস্পার্শ্বের আর সমস্ত পদার্থ উহার পাদদেশে ক্ষুদ্রাদপি ক্ষুদ্র বলিয়া মনে হইতেছে। চূড়ার আকারটি দীর্ঘ এবং উহার মাঝখানটা যেন ফুলিয়া উঠিয়াছে;—যেন একটা কুমীরের অণ্ডকে—একটা বৃহদাকার অণ্ডকে— মাটীর উপর দাঁড় করান হইয়াছে। চূড়াটি শুভ্র; তাহার উপর ইষ্টকগোলাপী রঙের একপ্রকার শিরাজাল, ইহা ভিন্ন আর-কোন অলঙ্কার নাই। চূড়ার উপরে যে-সকল পিতলের চাক্‌তি ও সূচ্যগ্র তাম্রখণ্ড ভল্ল-মুকুটরূপে শোভা পাইতেছে, সে সমস্ত গণনার মধ্যে না আনিলেও চূড়াটি দুইশত ফীট‌্