পাতা:ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ - জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২৯৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
গোধূলি-আলোকে জগন্নাথমন্দির।
২৯৫

আমার পিছনে-পিছনে চলিয়াছে; অক্লান্ত তাহাদের কৌতূহল। উহাদের যে সদ্দার, তাহার বয়স হদ্দ ৮ বৎসর, সকলেই বেশ সুন্দর-সুশ্রী; তাহাদের নেত্রযুগল কজ্জলরেখায় দীর্ঘীকৃত হইয়া কৃষ্ণকুন্তলে মিশিয়া গিয়াছে; তাহাদের দৃষ্টি অতীব সরল। তাহাদের কানে সোনার কানবালা, নাকে নথ্‌।

 রাত্রির পূর্ব্বেই বহুল যাত্রীর সমাগম হইবে জানিয়া, আমি সেই প্রতীক্ষায় ধীরে ধীরে মন্দির প্রদক্ষিণ করিতে লাগিলাম। মন্দিরের পশ্চাদ্ভাগে, বীথিটি খুবই নির্জ্জন। যদি এই বালিকাগুলি আমার পথের সাথী হইয়া আমার সঙ্গে-সঙ্গে না থাকিত, তাহা হইলে এই বীথিটি আরও বিষাদময় বলিয়া বোধ হইত, সন্দেহ নাই। উহারা আমার দুইফীট্‌ অন্তরে থাকিয়া সঙ্গে-সঙ্গে চলিয়াছে; আমি যেখানে থামিতেছি, উহারাও সেখানে থামিতেছে; যখন আমি দ্রুত চলিতেছি, উহারাও নূপুর ঝঙ্কৃত করিয়া দীর্ঘপদক্ষেপে চলিতেছে।

 গোলাপী রেখা-জালে বিভূষিত বৃহৎ মন্দিরচূড়াটি বরাবরই আমা হইতে সমান দূরে রহিয়া যাইতেছে; কেন না, উহা প্রাচীরবদ্ধ চতুষ্কোণ প্রাঙ্গণের কেন্দ্রবর্ত্তী; উহা আমার অলঙ্ঘনীয়; আমি উহার চতুর্দ্দিক প্রদক্ষিণ করিতেছি মাত্র। কিন্তু আরও অন্য কতকগুলি ছোট-ছোট মন্দির ভিতরদিকে প্রাচীরে ঠেস্ দিয়া রহিয়াছে,—সেই সকল মন্দির আমি নিকট হইতে দেখিতে পাইতেছি। এই সকল মন্দিরের চূড়া কুষ্মাণ্ডাকৃতি অথবা কুম্ভীরের অণ্ডের ন্যায়,—কিন্তু একটু কালিমাগ্রস্ত, ‘ফাট্‌-ধরা’ ও অতীব জরাজীর্ণ। কেবল মধ্যস্থলের বৃহৎ মন্দিরচূড়াটি—যাহা দূর হইতে দেখা যায়,—তাহাই ধব্‌ধবে শাদা, ও নূতন-টাট্‌কা বলিয়া মনে হয়, কিন্তু উহার ধরণটা আমাদের একেবারেই অপরিচিত! উহার গঠন যেরূপ বর্ব্বর-ধরণের, যেরূপ ‘ছেলেমানুষি’-ধরণের, উহার উপরে যেরূপ পিত্তলবিম্ব ও ঝক‌্ঝকে তিক্ষ্নাগ্র ধাতুখণ্ড সকল দৃষ্ট হয়, তাহাতে মনে হয়,