পাতা:ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ - জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২৬
ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ।

ব্রাহ্মণের দেশ বলিয়া চিনিতে পারি; আর তখনি বুঝিতে পারি, আমাদের দেশ হইতে এই স্থানটি কতটা দূর॥

 তরুতিমিরের মধ্যে, ছোট ছোট শাদা বারাণ্ডাওয়ালা বাড়ী পথের দুইধারে দেখা দিতে শুরু করিয়াছে; যেখানে আমাদের যাইবার কথা, সেই তৃণবল্লী-নগরে ইহারই মধ্যে আমরা আসিয়া পড়িয়াছি। পথের দুইধারে তালজাতীয় বৃক্ষশ্রেণী;—ভঙ্গুর বৃন্তের উপর ভর করিয়া আকাশে যেন কালে-কালো পাখা বিস্তার করিয়া আছে। এই তরুপথটি যেখানে শেষ হইয়াছে, সেইখানে একটি ছায়াচিত্র অঙ্কিত দেখিলাম। এই ছায়াচিত্রটি একটু বিশেষ ধরণের, অতীব নয়নাকর্ষক। ইহা একটি প্রকাণ্ড মন্দির। ভারতবর্ষে যে কখনো আসে নাই, সে-ও ইহাকে মন্দির বলিয়া চিনিতে পারে; কেন না, চিত্র-প্রতিমূর্তি-আদি দেখিয়া, পূর্ব্ব হইতেই উহাদের আকারসম্বন্ধে সকলেরই কিছু-না-কিছু অস্পষ্ট ধারণা থাকে। কিন্তু ঈদৃশ প্রকাণ্ড মন্দির সহসা নৈশগগনে সমুথিত দেখিব, ইহা কখন কল্পনা বা প্রত্যাশা করি নাই। ইহা যেন রাশীকৃত দেবমূক্তির একটা প্রকাণ্ড শুপ; ইহার চূড়াদেশও বিকটাকার মূর্তিতে আকীর্ণ। অসংখ্য তারকাদীপ্ত: আকাশপটের উপর এই ছায়চিত্রের কৃষ্ণবর্ণ-রেখাপাত হইয়াছে।

 একটু পরেই আমাদের গাড়ি, একটি প্রস্তরময় পিলানমণ্ডপের মধ্য দিয়া সেকেলেধরনের গুরুভার সমচতুষ্কোণ স্তম্ভশ্রেণীর মধ্যে প্রবেশ করিল। মন্দিরের এই অগ্রবর্তী প্রদেশটি অতিক্রম করিয়া, আবার যখন আমাদের মস্তকোপরি তারকা-মণি-খচিত গগনাম্বর প্রসারিত হইল, তখন দেখিলম, একটা বিপুল ঘেরের সম্মুখে আসিয়া পড়িয়াছি। তাহার সীমা লঙ্ঘন করিবার আমাদের অধিকার নাই। সেই প্রকাণ্ড মন্দিরটি একেবারে আমাদের সম্মুখে—খুব নিকটে। সেই বিসদৃশপরিমাণযুক্ত মহাভারাক্রান্ত প্রকাণ্ড মন্দিরচূড়ার নিম্ন দিয়া একটি পথ গিয়াছে—তাহার মধ্যে আমাদের