পাতা:ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ - জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩০১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
গোধূলি-আলোকে জগন্নাথমন্দির।
২৯৭

 এইবার বানরদিগের প্রস্থান করিবার সময়। উহাদের মধ্যে একটা বানর পিছ্‌লাইতে পিছ্‌লাইতে নীচে নামিয়া মাটীর উপর লাফাইয়া পড়িল; এবং ধৃষ্টতাসহকারে রাস্তা পার হইয়া বিক্রেতাদলের মধ্যে গিয়া উপস্থিত হইল; বিক্রেতাগণ পথ ছাড়িয়া দিল। অন্য বানরগুলা তাহার পিছনেপিছনে সারিবন্দি হইয়া চার পায়ে চলিতে লাগিল। দেখিলে মনে হয়, যেন কতকগুলা কুকুর,—কেবল পিছনের পা তাহাদের অপেক্ষা বেশী উচ্চ—ঊর্দ্ধপুচ্ছ হইয়া লাফাইতে লাফাইতে চলিয়াছে। যাইতে যাইতে প্রথম বানরটা বাজারের ঝুড়ি হইতে একটা কুল চুরি করিল; পরবর্ত্তী বানরগুলাও সেই একস্থান হইতেই ঐরূপ চুরি করিল; দোকানদার প্রতিবারই কোন আপত্তি না করিয়া তাহাদের অভিবাদন করিল। এক্ষণে উহারা চটুলভাবে একটা বাড়ীর গা বাহিয়া উঠিয়া দূরে চলিয়া গেল এবং ছাদের উপর দিয়া কোথায় অদৃশ্য হইয়া পড়িল।

 বহির্দিকে, মন্দিরপ্রাকারের গায়ে, তাল-তরুর ডালপালা ও দর্ম্মা দিয়া নির্ম্মিত প্রহরিস্থানের ন্যায় একটা ঘরে পাণ্ডবের একটা মূর্ত্তি,—দুইমানুষপ্রমাণ উচ্চ, দেখিতে ভীষণ, কৃষ্ণবর্ণ, লম্বা-লম্বা দাঁত, হাঁ করিয়া রহিয়াছে। একজন বৃদ্ধ পুরোহিত একটা পাদপীঠের উপর উঠিয়া তাহার গলায় হল্‌দে ফুলের মালা পরাইয়া দিল; তাহার সম্মুখে একটা প্রদীপ জ্বালিল, একটা ছোট ঘণ্টা বাজাইল, প্রণাম করিল, তাহার পর একটা মশারির মধ্যে বদ্ধ করিয়া, তাহাকে আবার প্রণাম করিতে করিতে প্রস্থান করিল। কি-একটা দ্রুতগামী ও দুর্লক্ষ্য জিনিষের হাওয়া আমার মুখে লাগিল! একটা বাদুড় অসময়ে বাহির হইয়া, খুব নিম্নদেশে উড়িয়া বেড়াইতেছে; জনতার মধ্যে বেশ বিশ্বস্তভাবে যাওয়া-আসা করিতেছে।

 মন্দিরচূড়ার অগ্রবিন্দুতে শেষ গোলাপী আভাটুকু এখনো রহিয়াছে; ইহাই পূজার সময়; মন্দির জনকোলাহলে ও বাদ্যনিনাদে পূর্ণ হইল। উভয়ই মিশ্রভাবে আমার কানে আসিয়া পৌঁছিল। ঐ গুপ্তস্থানের