পাতা:ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ - জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩০৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
গোধূলি-আলোকে জগন্নাথমন্দির।
২৯৯

নজরে আসিয়াছে। তাহাদের সহিত মিলিত হইবার জন্য, প্রতি মিনিটেই জনতার বৃদ্ধি হইতেছে।

 সেই পবিত্র গাভীবৃন্দও এইখানে রহিয়াছে,—উহারা জনতার মধ্যে বিচরণ করিতেছে। উহাদের মধ্যে একটা গরু, যাহাকে শিশুরা খুব আদর করিতেছে—সেই গরুটা প্রকাণ্ডকায়, একেবারে ধব্‌ধবে শাদা, ও খুব বৃদ্ধা। একটা ছোট কালো গরু, তাহার পাঁচটা পা; একটা ধূসর রং-এর গরু, তাহার ছয়টা পা; এই অতিরিক্ত পাগুলা এত ছোট যে, উহা মাটী পর্য্যন্ত পৌঁছে না—অসাড় মৃত অঙ্গের মত গরুর পায়ের উপর ঝুলিয়া রহিয়াছে।

 ঐ হোথা, রাস্তার শেষপ্রান্তে, তীর্থযাত্রীদিগকে দেখা যাইতেছে। সংখ্যায় দুই তিন শত হইবে। উহারা রং-করা বাখারির বড়-বড় চ্যাপ্টা ছাতা ধরিয়া আছে; এই ভরপূর সন্ধ্যার সময় এইরূপ ছাতা খুলিয়া রহিয়াছে দেখিলে বিস্মিত হইতে হয়; উহাদের কটি হইতে ভিক্ষার ঝুলি ও তাম্রকমণ্ডলু ঝুলিতেছে; বক্ষের উপর কতকগুলা মাদুলি, কতকগুলা রুদ্রাক্ষমালা, জটাপটি হইয়া রহিয়াছে; গাত্র ও মুখমণ্ডল ভস্মাচ্ছন্ন; উহারা খুব তাড়াতাড়ি চলিয়াছে, পরমারাধ্য মন্দির-চূড়াটি দর্শনমাত্রে যেন জ্বরবিকারের ঝোঁকে তাড়াতাড়ি চলিয়াছে।

 মন্দিরের প্রবেশদ্বারের উপরিস্থ নহবৎখানায়, যাত্রীদিগের স্বাগতঅভ্যর্থনা-উদ্দেশে নহবৎ বাজিতে আরম্ভ হইয়াছে; উপরে ঢাকঢোলের বাদ্য, তাহার সহিত লোকদিগের দীর্ঘোচ্চারিত জয়ধ্বনি ও শুভশঙ্খের বিকট নিনাদ মিলিত হইয়া দিগ্‌বিদিক্‌ প্রতিধ্বনিত করিতেছে।

 উহারা তাড়াতাড়ি,—খুব তাড়াতাড়ি চলিয়াছে। মন্দিরসম্মুখস্থ সৈকতভূমিতে আসিয়া উহারা ছাতা, বোঁচ্‌কা-বুঁচকি, ঝোলা-ঝুলি মাটীর উপর ফেলিয়া গন্তব্যপথে চলিতে লাগিল; বিকট প্রস্তরমূর্ত্তিগুলা যে দ্বার রক্ষা করিতেছে, সেই প্রবেশদ্বারের মধ্য দিয়া তুমুল কোলাহল-সহকারে উহারা