পাতা:ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ - জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩০৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
মোগলবিভবের ধবল প্রভা।
৩০১

আবার আমি সেই প্রদেশে আসিয়া পড়িয়াছি—যেখানে দুর্ভিক্ষের শুষ্কবায়ু নিশ্বসিত হইতেছে। আমি মুসলমান-আগ্রায় আসিয়া পৌঁছিয়াছি।

 আমার মত যে ব্যক্তি ব্রাহ্মণ্যিক ভারত হইতে আইসে, প্রথমেই একটা খুব পরিবর্ত্তন তাহার চোখে ঠ্যাকে; ধর্ম্মাধিষ্ঠানসমূহের যে চিত্র তার মনে অঙ্কিত ছিল, তাহা রূপান্তর প্রাপ্ত হয়; মস্‌জিদ্‌, মন্দিরের স্থান অধিকার করে। বিরাট্‌ কাণ্ডের পর, অতিপ্রাচুর্য্যের পর—সুসংযতা ক্ষুদ্রকায়া তন্বী শিল্পকলার সহসা আবির্ভাব হয়। স্তুপাকৃতি পদার্থসমূহের বদলে, পুরাণবর্ণিত দেবদানবের উদ্দাম প্রমোদচিত্রের বদলে, আগ্রার এই সমস্ত ভজনালয় শুভ্র মার্ব্বেলপ্রস্তরে মণ্ডিত এবং ঐ মার্ব্বেলের শুভ্রতার মধ্যে জ্যামিতিক-আকারের কতকগুলি বিশুদ্ধ নক্‌সা আড়া-আড়িভাবে পরস্পরের মধ্যে অনুপ্রবিষ্ট; চক্‌চকে পাথরের গায়ে শুধু কতকগুলি সাদাসিধা ফুল ইতস্তত অঙ্কিত।

 মহামোগল! আজ এই নামটি ঔপন্যাসিক বলিয়া মনে হয়—প্রাচ্যদেশীয় কোন পুরাতন গল্পের সামিল বলিয়া মনে হয়।

 পৃথিবীর মধ্যে বিশালতম সাম্রাজ্যের অধিস্বামী সেই মহামহিম নৃপতিগণ এইখানেই বাস করিতেন। তাঁহারা কতকগুলি প্রকাণ্ড প্রাসাদ পশ্চাতে রাখিয়া গিয়াছেন;—কেবল, তাঁহাদের আমলে উহাদের এরূপ ভগ্নদশা ও দৈন্যদশা উপস্থিত হয় নাই। উহাদের মধ্যে একটি প্রাসাদ হইতে সমস্ত আগ্রা দৃষ্টিগোচর হইয়া থাকে।

 তপ্তধূলিসমাকীর্ণ, কাক-চিল-শকুনি-সমাচ্ছন্ন আকাশের নীচে সেকালের পুরাতন ও সুবিশাল আগ্রাসহর প্রসারিত।

 আজ যে সময়ে এই সহরে প্রবেশ করিলাম, একদল বরযাত্রী বাহির হইতেছিল; ২০টা প্রকাণ্ড ঢাক তাহাদের আগে-আগে চলিয়াছে; বরটির বয়স ১৬বৎসর;—জরির কাজ-করা লাল মখ্‌মলের পোষাক-পরা; একটা শাদা-রঙের ঘোটকীর উপর আরূঢ়; একটি ছোট অদৃশ্য ‘কনে’