পাতা:ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ - জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩০৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
মোগলবিভবের ধবল প্রভা।
৩০৩

প্রদক্ষিণ করিলে দেখিতে পাওয়া যায়, Alhumbra-প্রাসাদের মত, শাদাপাথরের স্বপ্নময় লঘুধরণের একটি প্রাসাদ এই বিরাট্‌ দুর্গের উপর স্থাপিত; এবং তলদেশের কঠোর স্থূলপিণ্ডাকার গাঁথুনি হইতে এই প্রাসাদটি এতটা বিভিন্ন যে, এই বৈপরীত্য দেখিয়া সহসা বিস্মিত হইতে হয়। ঐ উপরে মহামোগল এবং তাঁহার সুলতানেরা বাস করিতেন; এবং প্রায় অন্তরীক্ষবাসী হইয়া, দুরধিগম্য হইয়া, শুভ্র-স্বচ্ছ প্রস্তর-রাশির মধ্যে প্রচ্ছন্ন থাকিয়া, সমস্ত রাজ্য শাসন করিতেন।

 ছুঁচাল-খিলান-বিশিষ্ট দ্বারের মধ্য দিয়া, খিলানের মধ্য দিয়া, একপ্রকার সুড়ঙ্গপথের মধ্য দিয়া, ‘তেহারা’ পুরু প্রাকার পার হইয়া, তবে ভিতরে প্রবেশ করিতে হয়। বড় বড় সিঁড়ি দিয়া উপরে উঠিতে হয়;—চারিদিকে সেই একই রক্তাভ ধূসরবর্ণ।

 তাহার পরেই সহসা স্বচ্ছপাণ্ডুবর্ণ;—নীরব ও শুভ্র ভাস্বরতা; এইবার মার্ব্বেলের মধ্যে আসিয়া পড়িয়াছি।

 শুভ্র সান্‌, শুভ্র প্রাচীর, শুভ্র স্তম্ভ, শুভ্র খিলানঘর, ছাদের ধারে খোদাই-কাজ-করা যে প্রস্তরময় গরাদে-বেষ্টন রহিয়াছে এবং যেখান হইতে দূর-দিগন্ত পরিলক্ষিত হয়, তাহাও শুভ্র;—সমস্তই শুভ্র। কেবলমাত্র, অমল-ধবল দেয়ালের গায়ে ইতস্তত কতকগুলি ফুল—‘agat’ ও ‘Parphyre’ পাথরের ফুল—উৎকীর্ণ রহিয়াছে; কিন্তু ঐ সমস্ত ফুল এত সূক্ষ্ম, এত মৃদুপ্রভ, এত বিরলবিন্যস্ত যে, এই প্রাসাদস্থ তুষারশুভ্রতার কোন বৈলক্ষণ্য হয় না। যেদিন এখানকার শেষ-বাদ্‌শা এই স্থান হইতে নিব্বাসিত হন, সেইদিন যেমনটি ছিল,—এই পরিত্যক্ত অবস্থার মধ্যেও, এই মরু-নিস্তব্ধতার মধ্যেও ঐ সমস্ত ঠিক্‌ তেম্‌নি টাট্‌কা, তেম্‌নি শুভ্র-স্বচ্ছ রহিয়াছে। মার্ব্বেলের উপর কালের হস্ত অতি বিলম্বে প্রকটিত হয়, তাই এই অপূর্ব্বসুন্দর জিনিষগুলি দেখিতে এমন ক্ষণভঙ্গুর ও সুকুমার হইয়াও, আমাদের নিকট ধ্রুবনিত্য বলিয়া প্রতীয়মান হইতেছে।