পাতা:ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ - জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩০৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ
৩০৫

আবশ্যক হইত। সকলেই জানে, আজকালকার রাষ্ট্রীয় মহাসভায় এই কাজের জন্য কোন বিশেষ লোকের প্রয়োজন হয় না।)

 বাদশার স্নানাগার শুভ্র—বলা বাহুল্য, একেবারে তুষারশুভ্র; আর তাহাতে কত জটিল রেখাবিন্যাস, কত ছোট-ছোট খিলান পরস্পরের মধ্যে অনুপ্রবিষ্ট, সহস্র-ভাঁজ-বিশিষ্ট কত ছুঁচাল খিলান, খুদিয়া বাহিরকরা বহু ঘর-কাটা শব্দযোনি কত খিলানমণ্ডপ, তাহার আর সংখ্যা নাই; মার্বেল-দেয়ালের উপর এক-একটা ফুলের ডাল ইতস্তত বিক্ষিপ্ত—যাহার এক-একটি টুক্‌রাই পরমাশ্চর্য্য;—উহা স্বর্ণ ও lapis-মণি দিয়া উৎকীর্ণ।

 যে সমস্ত প্রাকার এই অট্টালিকাকে ধারণ করিয়া রহিয়াছে—সেই প্রাকাবাবলীর শেষ প্রান্তভাগে, জুম্মামস্‌জিদের পাশে—খোলা ময়দানের পাশে, কত ছোট-ছোট হাওয়াখানা, লঘু গঠনের ছোট ছোট কত চতুষ্কমণ্ডপ; সেখান হইতে সমস্ত সহর দৃষ্টিগোচর হয়; এই সমস্ত গৃহ সুলতানাদিগের জন্য, অন্দরমহলের সমস্ত বেগমদের জন্য নির্দ্দিষ্ট ছিল। প্রাসাদের এই অঞ্চলেই, মার্ব্বেলের জালি-কাজের, জাফ্রি-কাজের বাহার খুলিয়াছে। দেয়ালের সর্ব্বাংশের মধ্য দিয়াই তুমি দেখিতে পাইবে, কিন্তু তোমাকে কেহই দেখিতে পাইবে না। এই দেয়ালগুলা আপাদমস্তক যে সব অখণ্ড প্রস্তরফলকে নির্ম্মিত, সেই সব প্রস্তরফলকে এত সূক্ষ্ম ছিদ্র কাটা যে, দূর হইতে মনে হয়, যেন সরু-সরু সুন্দর থামের মধ্যে শাদা জরির জাল টানা রহিয়াছে। কিন্তু এই সব কারুকার্য্য—যাহা সহসা ভঙ্গুর ও ক্ষণস্থায়ী বলিয়া মনে হয়—আসলে উহা খুবই পাকাপোক্ত; একটা মানুষ বিপুল অর্থক্ষয় করিয়া কত স্থায়ী ও সুন্দর জিনিষ নির্ম্মাণ করিতে সমর্থ—ইহাই তাহার একটি জ্বলন্ত দৃষ্টান্ত।

 এই বিরাট্‌ বাসগৃহের নিম্নস্থ গাঁথুনিসমূহের মধ্যে, যে নৈসর্গিক