পাতা:ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ - জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩১০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩০৬
ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ।

শৈলের উপর ইহা স্থাপিত সেই শৈলের মধ্যে, আরো কত দালান সুকৌশলে সন্নিবেশিত, আরো কত অর্দ্ধচ্ছায়াচ্ছন্ন স্থান অধিষ্ঠিত যাহার বিরাট্‌ মহিমার মধ্যে কি-জানি কেমন-একটা গুপ্তভাবের আভাস পাওয়া যায়। তন্মধ্যে, প্রধান সুলতানার স্নানাগারের মধ্যে প্রবেশ করিলে কেমন-একটা সুড়ঙ্গ-সুলভ শৈত্য অনুভব করা যায়; সেখানে আলোকের একটু ক্ষীণ রশ্মিমাত্র প্রবেশ করে; ইহা যেন জাদুকরের একপ্রকার মন্ত্রপূত গুহাবিশেষ, উহার খিলান-মণ্ডপের কাজ দেখিলে মনে হয়, ঠিক্‌ যেন বৃষ্টিধারা ঠাণ্ডায় জমিয়া গিয়াছে; উহার দেয়ালগুলা অতিসূক্ষ্ম দর্পণকাচে খচিত; আর্দ্রতা ও যবক্ষারের প্রভাবে এই সহস্র সহস্র ক্ষুদ্র কাচখণ্ডগুলির ‘জলুস্‌’ কমিয়া গিয়াছে; চুমকি-বসানো কোন পুরাতন জরির কাপড়ের মত ‘ম্যাড়্মেড়ে’ হইয়া পড়িয়াছে।

 পূর্ব্বকালে, ভারতের রূপযৌবনসম্পন্না সর্বশ্রেষ্ঠ সুন্দরীরাই এই অবরোধের মধ্যে বাস করিত; এবং এই সকল সান্‌, এই সকল বিশ্রামমঞ্চ—যাহার অমল ধবলতা কালও কলুষিত করিতে পারে নাই—উহারা বহুকাল যাবৎ ঐ সব বাছা-বাছা শ্যামাঙ্গিনী ললনার গাত্রস্পর্শ উপভোগ করিয়াছে।

 বিজয়ী মোগলদের আসিবার বহুশতাব্দী পূর্ব্বে এইখানে একটি দুর্গ ছিল; মোগলেরা আসিয়া এই দুর্গে দুইটি নূতন জিনিষের আমদানি করিয়াছে;—দুগ্ধধবল মর্ম্মরপ্রস্তর ও জ্যামিতিক রেখাবিন্যাসের অলঙ্কারপদ্ধতি। এই সকল দালানে এখনো ধূসর-লোহিত বর্ণের খোদাইকাজ দেখা যায়; এই সকল কাজ বহুপুরাতন-জৈনরাজাদিগের আমলের। ছায়ান্ধকার সিঁড়ি দিয়া নামিয়া, গুরুভার স্থূল প্রস্তররাশির মধ্য দিয়া এমন এক স্থানে আসিয়া পড়িলাম, যাহা অতীব ভীতিজনক ও শোকাবহ ঘটনায় পূর্ণ;—সেই সব অন্ধকূপ, যেখানে হতভাগ্য লোকসকল বিষাক্ত ভীষণ সর্পের মুখে পরিত্যক্ত হইত;—একটা ঘর, যেখানে সুলতানা-