পাতা:ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ - জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩১৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
মোগপবিভবের ধবল প্রভা
৩০৯

সর্বাপেক্ষা বৃহৎ—সেই অতুলনীয় তাজ,—যেখানে মহা-সুলতানা মন্তাজিমহল ২৭০ বৎসর হইতে মহানিদ্রায় নিমগ্না।

 সকলেই তাজ দেখিয়াছে, সকলেই তাজের বর্ণনা করিয়াছে—সেই তাজ, যাহা পৃথিবীর একটি আদর্শস্থানীয় পরমাশ্চর্য্য পদার্থ।

 ক্ষুদ্রায়তন চিত্রে, ‘মিনা’র কারুকার্য্যে,—ঝক্‌মকে-শ্রীপচ্‌কল্‌কাবিভূষিত-উষ্ণীষধারিণী মন্তাজি-মহলের[১] মুখশ্রী এখনো সংরক্ষিত;— সেই মুখশ্রী, যাহা নিজ পতি সুল্‌তানের এতটা প্রেম উদ্দীপিত করিয়াছি যে, তিনি সেই প্রেমে বিমুগ্ধ হইয়া এ-হেন অশ্রুতপূর্ব্ব মূর্ত্তিমতী মহিমাচ্ছটার মধ্যে মৃত্যুকে আবদ্ধ করিয়া রাখিয়াছেন।

 দুর্গের ন্যায় প্রাকারবদ্ধ একটি বৃহৎ গোরস্থান-উদ্যানের মধ্যে তাজ অবস্থিত; এরূপ প্রকাণ্ড অমল-ধবল মর্ম্মরপ্রস্তরস্তূপ জগতে আর দ্বিতীয় নাই। উদ্যানের প্রাচীর ধূসর-লোহিত-বর্ণ; বিশাল ঘেরের চারি কোণে বহির্দ্বারের মাথা ছাড়াইয়া শ্বেতপ্রস্তরখচিত যে সব উচ্চ গম্বুজ উঠিয়াছে, তাহাও ধূসর-লোহিত-বর্ণ। তাল ও সাইপ্রেস্‌-ঝাউর পংক্তি, জলের ছৌবাচ্ছাগুলা, সুচ্ছায় yoke-elm-বৃক্ষশ্রেণী,—সমস্তই একেবারে ঠিক সরলরেখায় স্থাপিত। এবং ঐ পশ্চাৎ-প্রান্তে কল্পনার আদর্শমূর্ত্তি এই সমাধিমন্দিরটি মহাগৌরবে রাজসিংহাসনে বিরাজমান; এই সমস্ত হরিৎশ্যামল উদ্ভিজ্জের মধ্যে, উহার তুষার-ধবলতা আরো যেন ফুটিয়া উঠিয়াছে। একটা ধবল প্রস্তরপীঠের উপর একটা প্রকাণ্ড গম্বুজ এবং ‘ক্যাথিড্রাল্‌’গির্জ্জার চূড়া অপেক্ষাও উচ্চ চারিটা ‘মিনার’-স্তম্ভ স্থাপিত রহিয়াছে। ঐ সমস্তের রেখাবিন্যাস কি প্রশান্ত, কি বিশুদ্ধ! উহার মধ্যে কি শান্তিময় সামঞ্জস্যের ভাব! কি উচ্চধরণের সহজ সরলতা! উহার সমস্তই বিরাট্‌-

  1. শাহাজানবাদশার পত্নী; বিবাহ হইবার চোদ্দবৎসর পরে, অষ্টম সন্তান প্রসব করিয়া, ১৭২৯ খ্রীষ্টাব্দে তাঁহার মৃত্যু হয়।