পাতা:ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ - জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩১৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩১২
ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ।

শুধু সেই সকল ‘ফুকরের মধ্য-দিয়াই যাহা-কিছু আলো ভিতরে প্রবেশ করে। স্তম্ভশ্রেণী ও খাঁজ-কাটা ‘খিলান—একটার-পর-একটা সারি-সারি বরাবর চলিয়া-গিয়া, দূর প্রান্তের অর্দ্ধচ্ছায়াচ্ছন্ন নীলিমার গর্ভে বিলীন হইয়াছে, কিন্তু সমস্ত প্রাসাদটিতে ধবল-প্রস্তরের শুভ্র স্বচ্ছতা পূর্ণভাবে বিরাজমান।

 যে দালানে সিংহাসন ছিল (সেই জনশ্রুত নিরেট সর্ণপিণ্ড ও পান্নার সিংহাসন), সেই সমস্ত দালানটি শাদা ও সোনালি রঙের। তা ছাড়া, উচ্চ মার্ব্বেল-দেয়ালে গোলাপগুচ্ছ বিকীর্ণ; চীনাংশুকের ফুলকাটা কাজের মত উহাতে টক্‌টকে গোলাপ ও ফিঁকা গোলাপের অভা অতি সুন্দররূপে মিশ্রিত হইয়াছে। এবং আজকাল আমাদের দেশে যাহাকে ‘নূতন শিল্পকলা’ বলে, সেই শিল্পকলার পদ্ধতি অনুসারে প্রত্যেক পাপ্‌ড়িটির চারিধার দিয়া সূক্ষ্ম সোনালি পাড় বেমালুমভাবে চলিয়া গিয়াছে। তা ছাড়া, lapis-ও ফিরোজা-রচিত নীলরঙের ফুলও ইতস্তত ছড়ান রহিয়াছে।•••আনাদের স্থূলধরণের ‘scrcen’ পর্দ্দার বদলে ভারতবর্ষে যে জালি-কাটা মার্ব্বেল-ফলকের ব্যবহার ছিল, সেইরূপ জালি-কাটা মার্ব্বেল-ফলকের মধ্য দিয়া দালানের পর দালান ক্রমাগত দৃষ্টিপথে পতিত হইতেছে।

 প্রাচীরবদ্ধ উদ্যানের তরুকুঞ্জে দুর্ভিক্ষবায়ুর উৎপীড়ন স্পষ্ট লক্ষিত হইতেছে;—শরতের বায়ুর মত উহা উদ্যানতরুর শেষ পাতাগুলা চতুর্দ্দিকে উড়াইয়া দিতেছে; আজ ঐ সব মরা-পাতা ঘূর্ণবাতাসে উড়িয়া এই মহানিস্তব্ধ প্রাসাদের মধ্যেও আসিয়া পড়িতেছে। উদ্যানের একটি গাছে এখনো ফুল ফুটিয়া আছে; বড়-বড় লাল ফুল বৃষ্টিধারার মত ঐ বৃক্ষ হইতে ঝরিয়া সমস্ত ধবলকুট্টিমকে—সিংহাসন-দালানের সেই অপূর্ব্ব প্রস্তরকুট্টিমটিকে ছাইয়া ফেলিয়াছে।

 যেখানে মোগলবাদশারা বাস করিতেন, সেই সমস্ত দেশই এখন