পাতা:ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ - জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩১৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ধ্বংসাবশেষের মধ্যে।
৩১৩

ধ্বংসাবশেষের মধ্যে।

নগরপ্রাসাদের বিস্তীর্ণ কঙ্কালস্তূপে পরিণত হইয়াছে। এখানকার মরা-মাটীর উপর যত ধ্বংসাবশেষ, মিশরের বালুরাশির উপরেও তত নাই। সেখানে, নীল-নদের ধারে, প্রকাণ্ড প্রকাণ্ড পাষাণস্তূপ; এখানে—খোদিত মার্ব্বেল, জালিকাটা ধূসরবর্ণের প্রস্তর, প্রস্তরময় জাফ্রির কাজ—বিষন্ন মাঠময়দানের মধ্যে হারাণ জিনিষের মত ইতস্তত পড়িয়া আছে। যেখানে কত শতাব্দী ধরিয়া মানবচিন্তা ও মানব-উদ্যম অসাধারণ স্ফূর্ত্তিলাভ করিয়াছিল, সেই এই ভারতবর্ষে পূর্ব্ব-পূর্ব্ব যুগের অসংখ্য ধ্বংসাবশেষ বিদ্যমান; এবং উহাদের প্রাচুর্য্যে, উহাদের সৌন্দর্য্যে, আমাদের আধুনিক কল্পনা দিশাহারা হইয়া যায়। অনেকগুলি নগর যুদ্ধবিগ্রহ ও লোকহত্যার পরেই ধবংস প্রাপ্ত হয়; আবার কতকগুলি বিলাসশোভন নগর অমুক অমুক রাজার খাম্‌খেয়ালী-আদেশক্রমে গঠিত হইতে আরম্ভ হয়, কিন্তু সময়ের মধ্যে শেষ হয় নাই; কতকগুলি প্রাসাদ অমুক সুলতানার জন্য পরিকল্পিত হয়, কিন্তু উহা ভাস্কর শিল্পীদিগেরই ব্যবহারে আসিয়াছে,—অন্য কেহ সেখানে কখনো বাস করে নাই।

 দিল্লি এবং প্রাচীন রাজধানীর ধ্বংসাবশেষ, যেখানে পৃথিবীর মধ্যে বোধ হয় উচ্চতম কীর্ত্তিস্তম্ভ সেই গোলাপী পাথরের কুতব-মিনার সমুত্থিত—এই দুই স্থানের মধ্যবর্ত্তী সমস্ত পথটার দুই ধারে, কত নগর ও কত দুর্গেরই ছায়ামূর্ত্তি দেখিতে পাওয়া যায়;—ত্রিশ-চাল্লিশ ফীট্‌ উচ্চ দস্তুর প্রাকার, পরিখা ও পরিখার যন্ত্রসেতু; ভিতরে জনপ্রাণী নাই; সমস্তই নিস্তব্ধ; কিংবা ভিতরে প্রবেশ করিলে দেখা যায়, গড়াইয়া-পড়া শিলারাশির মধ্য হইতে, কাটাগাছের ঝোপ্‌ঝাড়ের মধ্য হইতে, বানরের পাল উর্দ্ধশ্বাসে ছুটিয়া পলাইতেছে।