পাতা:ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ - জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩১৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩১৪
ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ।

 তা ছাড়া, কত গোরস্থান, তাহার আর শেষ নাই। কত ক্রোশ পর্য্যন্ত সমস্ত ভূমি মৃতদেহে পরিপূর্ণ; গোরস্থানের চতুষ্কমণ্ডপ, সকল যুগেরই সমাধিস্তম্ভ পর-পর চলিয়াছে;—রাশিরাশি ভাঙাচুরা জিনিষের মধ্যে গোলকধাঁধার মত পরস্পরের সহিত যেন জড়াইয়া-পাকাইয়া রহিয়াছে।

 ইহার মধ্যে কতকগুলি সমাধিমন্দির এখনো ভক্তিসহকারে বহুব্যয়ে সংরক্ষিত; আবার কতকগুলি একেবারেই প্রচ্ছন্ন—ধসিয়া-পড়া পরিত্যক্ত আরো অসংখ্য সমাধিমন্দিরের পিছনে যেন ডুবিয়া রহিয়াছে। প্রস্তররাশির মধ্য দিয়া, গর্ত্তসমূহের মধ্য দিয়া, ‘হাঁ-করা’ প্রাচীন গুহাগহ্বরের মধ্য দিয়া যে সকল পথ গিয়াছে এবং যে সকল পথ ঐ গোরস্থানে আসিয়া মিলিয়াছে, ঐ সকল পথ চেনা দুষ্কর হইত,—যদি ভিক্ষুকের দল, খঞ্জ কিংবা কুষ্ঠরোগী লোক খোঁটাচিহ্নের মত উহার চারিধারে না থাকিত। উহারা তীর্থযাত্রীদের নিকট ভিক্ষা পাইবার আশায় ঐখানে বসিয়া থাকে। এই সকল ধূলিসমাচ্ছন্ন পথ অতিক্রম করিবার পর হঠাৎ একএকটা চমৎকার মস্‌জিদ দেখিয়া বিস্মিত হইতে হয়;—জালিকাটা মার্ব্বেলের দেয়াল, লাল রেশমের কাপড়ে যেন সোনালি পাড় বসান, জম্‌কালো কার্পেট—যাহার উপর টাট্‌কা gardenia ও tubercuse পুষ্পসকল সজ্জিত রহিয়াছে। ইহার মধ্যে প্রাচীন ফকীরদর্ব্বেশের বাসগৃহগুলিই সর্ব্বাপেক্ষা বিভবময়। উহারা নিজে ইচ্ছা করিয়াই দৈন্যের মধ্যে বাস করিত ও পরম সন্ন্যাসব্রত অবলম্বন করিত; কিন্তু কোন কোন রাজা উহাদের স্মৃতিরক্ষার জন্য এইরূপ মুক্তহস্তে অর্থব্যয় করিতে কুণ্ঠিত হইতেন না।

 প্রাকারাবলী ও খোদিত প্রাসাদাদির বহুপূর্ব্বেই গোলাপী পাথরের মিনারটি এই মৃত্যুর দেশের দিগন্তভাগে, বহুদূর হইতে নেত্রসমক্ষে প্রকাশ পায়। শুষ্ক পাথুরে জমির তরঙ্গায়িত ক্ষেত্রের উপর দিয়া এই প্রকারপ্রাসাদাদি মিনারের পাদদেশ পর্য্যন্ত প্রসারিত রহিয়াছে। এই সমস্ত শুষ্ক পাথুরে ভূমিখণ্ডের উপর এখন শুধু রাখালরা ছাগল চরাইয়া থাকে।