পাতা:ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ - জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩১৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ধ্বংসাবশেষের মধ্যে।
৩১৫

 এখন প্রায় মধ্যাহ্ন; দুঃসহ প্রখর উত্তাপ; এই সময়ে আমি কোণালুখিলান-বিশিষ্ট যুগলদ্বার পার হইয়া এই ছায়ামূর্ত্তি নগরের মধ্যে প্রবেশ করিলাম। একটা শ্মশানের মত ভূমিখণ্ড—বড় বড় দস্তুর প্রাকারে বেষ্টিত এবং এত বিশাল যে, সেই ঘেরের সমস্ত আয়তন সম্পূর্ণরূপে দৃষ্টিগোচর হয় না। উহার ভিতরে কতকগুলা গাছ, যাহা জলাভাবে মরিয়া যাইতেছে এবং উষ্ণবায়ু যাহার স্বর্ণ-পীত পত্রপুঞ্জ চারিদিকে উড়াইয়া ফেলিতেছে; আকার-গঠনহীন কতকগুলা প্রস্তরস্তূপ; ইতস্তত দৃশ্যমান কতকগুলা গম্বুজ, কতকগুলা মিনার—এতটা ক্ষয়গ্রস্ত হইয়াছে যে, উহাদিগকে শৈলখণ্ড বলিয়া ভ্রম হয়; কেবল ঐ আশ্চর্যজনক মিনারের সন্নিকটে যে সকল গুরুভার বৃহদাকার ইমারতের অবশেষগুলি আছে, তাহা রাজকীয় মহল বলিয়া বেশ বুঝা যায়। কিন্তু এই গৌরবান্বিত ভগ্নাবশেষগুলির গঠনরীতি একপ্রকার নহে—বিভিন্ন গঠনরীতি একত্র মিশিয়া গিয়াছে; এত যুদ্ধবিগ্রহ, এত আক্রমণ এই প্রাচীন ভূমির উপর দিয়া গিয়াছে, এতবার ধ্বংস হইয়াছে, আবার অমানুষিকভাবে এতবার নূতন করিয়া গঠিত হইয়াছে যে, ইহার কোন ঠিক ঠিকানা পাওয়া যায় না। পৃথিবীর এই কোণটির ইতিহাস ঘোর তিমিরজালে সমাচ্ছন্ন।

 ঐখানে—উপকথা বর্ণিত কোন রাজার প্রাসাদের মধ্যে, সহস্রবৎসরব্যাপী প্রস্তররাশির সুশীতল ছায়াতলে, আমি আজ সমস্ত নিস্পন্দ মধ্যাহ্নকালটা আপনাকে আবদ্ধ করিয়া রাখিব। কয়েকঘণ্টা একাগ্রচিন্তায় কিংবা নিদ্রায় অতিবাহিত করিবার জন্য, একটি ভৃত্যও সঙ্গে না লইয়া একাকী আমি একটা উচ্চ বারাণ্ডার কোণে আপনাকে স্থাপন করিলাম—অসংখ্য চৌকো-থাম-বিশিষ্ট ও প্রাচীন ভাস্করকার্য্যে আচ্ছন্ন একটা দালানঘর হইতে এই বারাণ্ডাটি বাহির হইয়াছে। এই সমস্ত ধ্বংসাবশেষের সহিত ঘনিষ্ঠরূপে পরিচিত হইবার উদ্দেশে—আজ এখানকার যাহারা গৃহস্বামী, সেই সব পশুদের সহিত ঘনিষ্ঠরূপে পরিচিত হইবার উদ্দেশেই আমি একাকী