পাতা:ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ - জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩২০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩১৬
ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ।

এখানে আসিয়াছি। বাহিরে—প্রচণ্ড মার্তণ্ড এই বিস্তীর্ণ মরুভূমির উপর অনলবর্ষণ করিতেছে; পতঙ্গের গান, মক্ষিকার গুঞ্জন এখানে শোনা যায় না, কেবল দূরদূরান্তর হইতে কোন নিঃসঙ্গ টিয়াপাখীর তীক্ষ্ণ কণ্ঠস্বর ছাড়া আর কিছুই শোনা যায় না; উপরে, প্রাসাদের খোদাই-কাজের মধ্যে তাহার নীড়, সে প্রাসাদের মধ্যে প্রবেশ করিয়া নিদ্রা যায়। অথবা, দুর্ভিক্ষের দম্‌কা-বাতাসে তাড়িত হইয়া যে-সব শুক্‌নাপাতা ঘোরপাক খাইতে খাইতে স্তম্ভশ্রেণীর মধ্যে আসিয়া পড়ে,—তাহারই মর্ম্মর শব্দ কচিৎ-কখন শুনা যায়।

 দালান-ঘরের গুরুভার ছাদটা যে সকল প্রস্তরখণ্ডে আচ্ছাদিত, সেই প্রস্তরখণ্ডগুলা আড়াআড়িভাবে এবং কৌণিক স্তূপের আকারে উপর্য্যুপরি স্থাপিত; এগুলি অতিদীর্ঘ অখণ্ড প্রস্তর; আমাদের পুরাতন ছাদের কাঠাম যেরূপ বড়-বড় গুঁড়িকাঠের উপর স্থাপিত হইত, ইহা কতকটা সেই ধরণের। যে সময়ে গম্বুজ অজ্ঞাত ছিল, বক্র-খিলান অজ্ঞাত ছিল, কিংবা তাহার উপর লোকের সম্পূর্ণ বিশ্বাস ছিল না—সেই সময়কার মানবজাতির শৈশবকালোচিত এই গঠনপদ্ধতি। আমার নীচে, প্রথমেই স্তম্ভের অরণ্য। থামগুলা প্রকাণ্ড,—বলা বাহুল্য, অখণ্ড পাথরের—এবং উহার চৌকোণা ধরণ দেখিয়া খুব পুরাতন হিন্দু-আমলের বলিয়া কল্পনা করা যায়। আমি যে অন্ধকারাচ্ছন্ন ছায়াময় কোণটিতে বসিয়া সমস্ত দেখিতেছি, সেখানকার কতকগুলি ‘গুলগুলি’-গবাক্ষ হইতে বাহিরের জিনিষও দেখিতে পাইতেছি, লাল পাথর দেখিতেছি, ধূসরবর্ণের পাথর দেখিতেছি, বেগ্‌নি রঙের পাথর দেখিতেছি,—মনে হইতেছে, বাহিরের সমস্ত ধ্বংসাবশেষ অগ্নিময় সূর্য্যকিরণে প্রজ্বলিত হইয়া উঠিয়াছে। আরো একটু দূরে, বায়ু এরূপ স্বচ্ছ এবং আলোটা এরূপ ঠিকভাবে পড়িয়াছে যে, আমি এখান হইতে স্পষ্ট দেখিতে পাইতেছি—কতকগুলা দ্বারপ্রকোষ্ঠ খাড়া হইয়া রহিয়াছে—উহার কোণালু খিলানে চমৎকার খোদাই-কাজ এবং আদিম-কালের coufique