পাতা:ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ - জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩২২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩১৮
ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ।

 যে বারাণসীসম্বন্ধে আমি ভয়ে-ভয়ে আছি, সেই বারাণসী-অভিমুখে যাইবার পথে এইটি আমার শেষ আড্ডা; দুইদিনের মধ্যেই আমি সেখানে পৌঁছিব; সেখানে গিয়া নিশ্চয়ই বিড়ম্বিত হইব, কিন্তু সেই মহাবিড়ম্বনা হইতে এখন আর পিছাইবার জো নাই।•••এই সব ধ্বংসাবশেষের রহস্যময় শান্তির মধ্যে, সেই বিষয়ে আমি অনেক চিন্তা করিয়াছি; আমার মন সেই সাধুসন্ন্যাসীদিগের গৃহাভিমুখে ধাবিত হইতেছে যাঁহাদের শাকান্নের আতিথ্য—যাহাদের অদ্ভুত বিস্ময়জনক আতিথ্য আমি গ্রহণ করিব বলিয়া স্বীকৃত হইয়াছি।…

 কিন্তু চারিদিক্‌কার জড়তাপ্রভাবে আমার মন নিদ্রা ও স্বপ্নে অভিভূত হইলেও, আমার কল্পনাকে এখনো সেই বৃহৎ মিনারটি অধিকার করিয়া রহিয়াছে—যাহা এক্ষণে আমার খুবই নিকটে রাজসিংহাসনে বিরাজমান। গল্প আছে, রাজকন্যার খেয়াল হইল, দিগন্তপটে দূববাহিনী একটি নদী দেখিবেন; রাজা স্বীয় দুহিতার খেয়াল চরিতার্থ করিবার জন্য উদ্ধগামী নদীর আকারে ঐ মিনার নির্ম্মাণ করাইলেন। আমার বারাণ্ডার জানালা দিয়া উহা যেমন স্পষ্ট দেখা যায়, এমন আর কোথা হইতেও নহে। একটা গোলাপী-রঙের দ্বারপ্রকোষ্ঠের পার্শ্বদেশে, ঐ গোলাপী মিনারটি অমলশুভ্র আকাশ ভেদ করিয়া উর্দ্ধে উঠিয়াছে। উহার তন্বী শ্রী, উহার উচ্চতা দর্শনে নেত্র বিহ্বল হইয়া পড়ে; অন্যান্য জানিত মিনার ও মিনারেটের যেরূপ পরিমাণ,[১] তাহা ছাড়াইয়া উঠিয়াছে; তলদেশ যেরূপ ফুলিয়া উঠিয়াছে, তাহাতে মনে হয়, যেন মিনারটি ঝুঁকিয়া রহিয়াছে; তা ছাড়া, বড়ই আশ্চর্য্য—এমন যে চমৎকার জিনিষ—এখন এমন অক্ষত ও অক্ষুণ্ন—উহা ধ্বংসাবশেষ-বিকীর্ণ মরুভূমির মধ্য হইতে উত্থিত হইয়াছে। উহার পাথর

  1. এই মিনারটি ২৪০ ফীট্‌ উচ্চ; ইহা প্রাচীন ভারতে একটা পরমাশ্চর্য্য সামগ্রী।