পাতা:ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ - জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩২৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩২০
ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ।

 এখন প্রায় তিনটা বাজিয়াছে। আবার জীবন-উদ্যম আরম্ভ হইল। সবুজ টিয়াগুলা খিলানের গর্ত্ত হইতে বাহির হইল, খোদাই-কাজের ফাঁকের ভিতর পায়ের নখ বসাইয়া কি করিবে ভাবিতে লাগিল, বহির্দ্দিকে দৃষ্টিপাত করিতে লাগিল; তাহার পর চীৎকার করিতে করিতে সাঁ করিয়া উড়িয়া গেল। ছাগত্রয়ও জাগিয়া উঠিল, মুড়া ও শুক্‌না ঘাসের সন্ধানে বাচ্ছাদের লইয়া বাহির হইল। এবং আমিও ছায়াদেহসার নগরটিতে ভ্রমণ করিবার জন্য নীচে নামিলাম।

 গৃহের ভগ্নাবশেষ, মন্দিরের ভগ্নাবশেষ, প্রাসাদ ও মস্‌জিদের ভগ্নাবশেষ; হেথা-হোথা শীর্ণ গাভীবৃন্দ প্রস্তরাদির মধ্যে তৃণচর্ব্বণের চেষ্টা করিতে করিতে ক্রমে প্রাচীরবদ্ধ সেই শ্মশান-বিষ ভূমিখণ্ডের মধ্যে ছড়াইয়া পড়িল। যাহারা গরু চরাইতে আসিয়াছিল, সেই বুনো রাখালের চাপা আওয়াজে বাঁশী বাজাইতেছিল। তাহাদের মুখে চিন্তার ভাব, ভয়ের ভাব; চতুর্দ্দিক্‌স্থ দেবালয়ের ধ্বংসদশা তাহাদের মনে এই ভীতির উদ্রেক করিয়াছে। চারিদিক্‌ হইতেই দেখা যায় ঐ গোলাপী মিনারটি মাথা তুলিয়া রহিয়াছে; এই সার্ব্বভৌম ধ্বংসদৃশ্যের মধ্যে, উহা যেন সাক্ষিরূপে দণ্ডায়মান।

 অস্পষ্ট-অনির্দ্দেশ্য চৌমাথা-রাস্তার উপর, কতকগুলা দেয়ালের গায়ে। এখনো কতকগুলা গবাক্ষ রহিয়াছে; এখনো কতকগুলা বারণ্ডা বাহির হইয়া রহিয়াছে; পূর্ব্বে সেখান হইতে সুন্দরীরা বেগ্‌নী পরিচ্ছদে আচ্ছাদিত গজবৃন্দের গমনাগমন, সারিবন্দি বৃহৎ ছত্রের উৎসব-ঠাট্‌, অশ্বারোহী যোদ্ধৃবর্গের রণযাত্রা, গৌরবান্বিত, প্রাচীনকালের জনতা—এই সমস্ত নিরীক্ষণ করিত।...আহা! লুপ্ত রাজপথের কোণে-কোণে অবস্থিত এই সর নহবৎখানার কি বিষন্ন মুখশ্রী!

 ১৮২৭ খৃষ্টাব্দে ইহার পুনরুদ্ধার হয়।