পাতা:ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ - জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩২৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩২২
ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ।

সমগ্র প্রাকার-বপ্রাদি একটা অখণ্ড প্রস্তরখণ্ডের মত নদীর উচ্চতটের উপর গড়াইয়া পড়িয়াছে এবং পড়িয়া সেইখানেই থাকিয়া গিয়াছে; কোন জাগতিক প্রলয়বিপ্লবের পর যেভাবে ঝুঁকিয়া থাকে, সেইরূপ অচল ভঙ্গীসহকারে বিস্ময়স্তম্ভিত হইয়া যেন আপনার আসন্নপতন প্রতিমুহূর্ত্তে প্রতীক্ষা করিতেছে।

 ত্রিশচাল্লিশ ফীট্‌ উচ্চতার কমে নিরাপদ্‌ স্থানের আরম্ভ হয় নাই; সেইখানেই মনুষ্যগৃহের প্রথম গবাক্ষ উদ্ঘাটিত হইয়াছে, বারণ্ডা বাহির হইয়াছে, বলভী উঠিয়াছে। আরো নীচে গঙ্গারই একাধিপত্য, বৎসরের মধ্যে অন্তত একবার সকলকেই উহাতে ডুব দিতে হইবে; চিরদিনই উহার পবিত্র মৃত্তিকা লইয়া গায়ে লেপিতে হইবে; উহারই জন্য নিবাস-আদি নির্ম্মাণ করিতে হইবে; দুর্গের গুপ্ত-গারদের মত প্রকাণ্ড-প্রকাণ্ড চতুষ্কমণ্ডপ—তাহার মধ্যে গুরুভার, স্থূল ও খর্ব্বকায় দেববিগ্রহ রক্ষিত, প্রকাণ্ড-প্রকাণ্ড ভিত্তিভূমি, বিকট-ভীষণ প্রস্তরস্তূপ—এই সমস্ত অচল-প্রতিষ্ঠ বলিয়া মনে হয়; কিন্তু কোন-কোন সময়ে নদীর স্রোতে এরূপ ভীষণ বেগ উপস্থিত হয় যে, উহাদিগকে কাঁপাইয়া তুলে—গ্রাস করিয়া ফেলে।

 গৃহাদির উর্দ্ধে, প্রাসাদাদির উর্দ্ধে, হিন্দুমন্দিরের অসংখ্য চূড়া পশ্চিমগগনে সমুত্থিত; রাজস্থানের ন্যায় এখানকার মন্দিরের চূড়াগুলাও বড়-বড়-প্রস্তরময় ঝাউএর আকারে গঠিত, কিন্তু এখানকার এই মন্দিরচূড়াগুলা লাল—ঘোর লাল,—তাহার সহিত ম্লানাভ সোণালি-কাজ মিশ্রিত। সমস্ত বারাণসীর মন্দিরচূড়াগুলি রক্তিম—কেবল চূড়ার অগ্রবিন্দুগুলি সোনালী। নদী যেমন-যেমন বাঁকিয়া গিয়াছে—সেই অনুসারে নগরীর এক প্রান্ত হইতে অপর প্রান্ত পর্য্যন্ত প্রস্তরময় সোপানাবলী তটভূমির উপরে যেন পক্ষ বিস্তার করিয়া রহিয়াছে—যেন একটা প্রকাণ্ড পাদপীঠ (pedestal) উপর হইতে—যেখানে মানুষের বসতি,