পাতা:ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ - জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩২৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ
৩২৫

অর্দ্ধনিমজ্জিত; উহাদের প্রত্যেকেই একএকটা হাল্‌কা খাটিয়ার উপর শুইয়া আছে; উহাদের জন্য যে চিতা সজ্জিত হইতেছে, তদুপরি স্থাপিত হইবার পূর্ব্বেই পাশ্ববর্ত্তী অন্যান্য জীবন্ত লোকের ন্যায় উহারাও গঙ্গার পূতজলে স্নান করিয়া লইতেছে।

 পরপারের তটভূমি—পঙ্ক ও তৃণাদিতে আচ্ছন্ন অসীম ক্ষেত্র, যাহা প্রতিবৎসরেই গঙ্গার মধ্যে নিমজ্জিত থাকে—এই তটভূমির উপর সন্ধ্যার কুয়াসা ক্রমেই ঘনাইয়া আসিতেছে; প্রথমে ঐ তটভূমির উপর একট অনির্দ্দেশ্য ধোঁয়া-ধোঁয়া ভাব দেখা যাইতেছিল; ক্রমে এই সব কুয়াসা আকাশের মেঘের মত একএকটা সুগঠিত আকার ধারণ করিতে লাগিল। মনে হইল, যেন এই পবিত্র বৃহৎ-নগরী, পদতলস্থ জলদ-চূড়াগুলা নিরীক্ষণ করিবার জন্য অর্দ্ধচক্রাকারে খাড়া হইয়া উঠিয়াছে।

 শ্মশানের ঐ কোণটিতে একজন যুবা সন্ন্যাসী দণ্ডায়মান, বক্ষের উপর বাহুদ্বয় আড়াআড়িভাবে বিন্যস্ত এবং ঐ আর্দ্র চিতার মধ্যে কি-একটা ঘোর ব্যাপার চলিতেছে, তাহাই দেখিবার জন্য সেই দিকে মাথা ঝুঁকাইয়া রহিয়াছে। তাহার চুলগুলা কাধের উপর ঝুলিয়া পড়িয়াছে, তাহার নগ্নদেহ যাহা এখনো পর্য্যন্ত সুন্দর ও মাংসল—শ্বেতচুর্ণে আচ্ছন্ন; এবং যেরূপ ফুলের মালা প্রতিদিন নদীতে নিক্ষিপ্ত হইয়া থাকে, সেইরূপ একটা ফুলের মালা তাহার বক্ষের উপর বিলম্বিত।

 চিতাগুলার একটু উপরে,—বহুকাল হইতে নদীব উপর গড়াইয়া পড়িয়াছে এমন একটা পুরাতন প্রাসাদের উপরিভাগে, ধুতি-কাপড়ে আচ্ছাদিত ৫/৬জন লোক উবু হইয়া বসিয়া আছে, ঐ সন্ন্যাসীর মত উহারাও অনন্যমনে ঐ দিকে তাকাইয়া রহিয়াছে! উহারা ঐ মৃতদিগের আত্মীয়জন; বিশেষত উহাদের মধ্যে দুইজন, যাহাদের দেহ বার্দ্ধক্যে নত হইয়া পড়িয়াছে, উহারা—তিনটা চিতার মধ্যে যেটি সর্ব্বাপেক্ষা ছোট ও গরিব-ধরণের, সেইটির দিকে আকুলভাবে তাকাইয়া রহিয়াছে। আমার হিন্দুমাঝি বলিল,