পাতা:ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ - জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩৩০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩২৬
ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ।

“ওটি দশবৎসরের একটি ছোট ছেলে,—উহাকে পোড়াইবার জন্য উহারা খুব অল্প কাঠ আনিয়াছে।” ঐ চিতা হইতে ধুমরাশি উত্থিত হইয়া ঐ অচলমূর্ত্তি লোকগুলার দিকে ধাবিত হইল। যাহারা দাহ করিতেছিল, তাহাদের মধ্যে দুইজন একটা অতীব কদর্য্য ন্যাক্‌ড়া কটিদেশ হইতে টানিয়া-লইয়া চিতায় ক্রমাগত বাতাস দিতে লাগিল—ক্রমে চিতাটা ধোঁয়াইতে আরম্ভ করিল; এইবার উহাদের শিশুটির দেহ ভস্মসাৎ হইবে। এবং চতুর্দ্দিকের এই সমস্ত মন্দিরপ্রাসাদাদি—যাহা কুয়াসাচ্ছন্ন আকাশ ভেদ করিয়া উর্দ্ধে উঠিয়াছে, উহারা সদর্প ঔদাস্যসহকারে ও পরমনির্ব্বিকারচিত্তে এই শ্মশান-কোণটির উপর দৃষ্টিনিক্ষেপ করিয়া দরিদ্র শবের বিলম্বিত দাহকার্য্য অবলোকন করিতেছে—সেই শ্মশান, যেখানে সমস্ত রক্তমাংসের শেষ হয়, মৃত্যুতে সমস্ত দুঃখকষ্টের অবসান হয়।

 এই সময়ে, বিরাট্‌ সোপানাবলীর শীর্ষদেশে, চিতার আর একটি নূতন আহুতি আসিয়া উপস্থিত হইল; এই পঞ্চম শবটি, ঐ উপরের একটি ছায়াময় সরুপথ হইতে বাহির হইয়া এই বৃদ্ধা গঙ্গার অভিমুখে আসিতেছে; উহারও ভস্মরাশি গঙ্গায় নিক্ষিপ্ত হইবে। ডুলির আকারে বাঁশের কতকগুলা শাখা পাশাপাশি বাঁধা, তাহার উপর শবটি রহিয়াছে; ‘ট্যানা-পরা অর্দ্ধনগ্ন ছয়জন লোক উহাকে লইয়া আসিতেছে। শবের পা সম্মুখে বাহির হইয়া রহিয়াছে এবং পথটা এত বেশী ঢালু যে, মনে হইতেছে যেন শবটা প্রায় খাড়া হইয়া রহিয়াছে। কেহই অনুগমন করিতেছে না, কেহই কাঁদিতেছে না। কতকগুলি বালক, যাহারা স্নানের জন্য নীচে নানিতেছে, তাহারও যেন উহাকে দেখিয়াও দেখিতেছে না, উহার চতুর্দ্দিকে উৎফুল্লভাবে লাফালাফি করিতেছে। বারাণসীতে আত্মাই শুধু ধর্ত্তব্যের মধ্যে; তাই আত্মা চলিয়া গেলে যাহা অবশিষ্ট থাকে, তাহাকে তৎক্ষণাৎ বিযুক্ত ও অপসারিত করা হয়। প্রায় দরিদ্রেরাই শবের সঙ্গে সঙ্গে শ্মশানে আইসে; তাহাদের ভয় হয়, পাছে দাহের জন্য কাঠে না