পাতা:ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ - জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩৩৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩৩০
ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ।

আসিয়া দেখিলে আরো অদ্ভুত বলিয়া মনে হয়; ইহা যেন, বাণ্ডিলের মত বাঁধা ছোট-ছোট চূড়ার সমষ্টি, ছোট-ঘোট অসংখ্য একইরকমের জিনিষ, ইহার এই অপরিবর্ত্তনীয় আকার শতশত বৎসর হইতে সমান চলিয়া আসিতেছে। আমাদের পাশ্চাত্য বাস্তুবিদ্যার পরিজ্ঞাত কোনকিছুরই সহিত ইহার সাদৃশ্য নাই।

 এক্ষণে বারাণসীর সমস্ত ব্রাহ্মণমণ্ডলী এই গভীরসলিলা নদীর ঘাটে আসিয়া সমবেত হইয়াছে; তীরে বাঁধা ছোটছোট অসংখ্য ডিঙীনৌকা উপাসকদিগের ভারে নত হইয়া পড়িয়াছে—জলের ভিতর অনেকটা ডুবিয়া গিয়াছে। উহাদের মধ্যে কেহ বা অঞ্জলিবদ্ধ হইয়া রহিয়াছে, কেহ বা জলের উপর পুষ্পনিক্ষেপ করিতেছে। এই সমস্ত লোকের উর্দ্ধদেশে ধূসরবর্ণের সোপান, ধূসরবর্ণের সোপানভিত্তি; এই সমস্ত গাঁথুনির গঠন ভারী-ধরণের ও রং পাঁকের মত। দেখিলে মনে হয়, যেন পবিত্র বারাণসীর মূলগুলা পর্য্যন্ত বাহির হইয়া পড়িয়াছে।

 আবার আমার নৌকা ধীরে ধীরে চলিতে লাগিল, অপেক্ষাকৃত নির্জ্জন ঘাটের সম্মুখ দিয়া চলিতে লাগিল; এই অঞ্চলটায় কেবল পুরাতন প্রাসাদ, নদীর ধারে কোন ডিঙা বাঁধা নাই। গঙ্গার উপর চতুষ্পার্শ্ববর্ত্তী রাজাদিগের একএকটা নিবাসগৃহ—একটু ‘পোড়ো’-ধরণের—তাহারা সময়ে সময়ে সেইখানে আসিয়া বাস করেন। প্রথমেই গুরুপিণ্ডাকার প্রকাণ্ড প্রাকার সিধা উঠিয়াছে, তাহাতে কোন প্রকার ছিদ্রপথ নাই, কেবল খুব উপরদিকে,—এই সমস্ত দুর্ভেদ্য আবাসগৃহের গবাক্ষ, বারণ্ডা, জীবন আরম্ভ হইয়াছে। আজ সন্ধ্যায় প্রাসাদের ভিতরে সঙ্গীত হইতেছে—এ সঙ্গীতের সুর চাপা, কাঁদুনে, ও অল্পদমের। শানাইয়ের কাঁদুনি শুনা যাইতেছে—শানাইয়ের আওয়াজটা কতকটা আমাদের hautbois-যন্ত্রের আওয়াজের মত। মাঝে মাঝে একটি মাত্র তান, একটি মাত্র বিলাপধ্বনি উপরে উঠিতেছে, আবার মরিয়া যাইতেছে; তাহার