পাতা:ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ - জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩৪০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩৩৬
ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ

আমাদের উদ্যানেরই মত সেই নিবিড় ছায়া, সরু-সরু পথের দুধারে সেকেলে-ধরণে-বসানো সেই ফুটন্ত গোলাপগাছ।

 আমার নিমন্ত্রকেরা দয়ার্দ্র-স্মিতমুখে ও মৃদুমধুর সম্ভাষণে আমাকে অভ্যর্থনা করিলেন। তাঁহাদের মুখশ্রী সুন্দর ও গম্ভীর; কৃষ্ণকুন্তলশোভিত যিশুখৃষ্টের যেন কতকগুলি পিত্তলমূর্ত্তি। তাঁহাদের অতীব মধুর দৃষ্টি আমার উপর নিপতিত হইয়া আবার তখনি যেন ঔৎসুক্যবিহীন হইয়া অন্যত্র—আরো ঊর্দ্ধে—বোধ হয় সেই সূক্ষ্মশরীরের জগতে ফিরিয়া গেল—যেখানে মৃত্যুর পূর্ব্বেই তাঁহাদের আত্মাপুরুষ কখন-কখন উড়িয়া যায়।

 এরূপ শান্তিময়—এরূপ আতিথেয় গৃহ আর কোথাও নাই। যে-কেহ এখানে আসিতে চায়, তাহার জন্যই ইহার দ্বার চির-অবারিত।

 তথাপি, কি-এক গভীর ও অনির্দ্দেশ্য ভীতির ভাব আমার মনকে অধিকার করিল। আমি ভয়ে-ভয়ে দ্বারে আঘাত করিলাম। আমি বুঝিয়াছিলাম, ইহাই আমার শেষ-চেষ্টা। যদি এখানে কিছু না পাই, তবে আর কোথাও কিছুই পাইব না।

 এই তত্ত্বজ্ঞানীরা ধ্যানও করেন, কাজও করেন এবং অন্য হিন্দুর ন্যায় ইহারাও অতীব মধুব ধৈর্য্যসহকারে ভূচর-খেচর উভয়প্রকার জীবেরই অত্যাচার সহ্য করিয়া থাকেন। গাছের ছোট-ছোট কাঠবিড়ালী জান্‌লা দিয়া ইহাদের গৃহে প্রবেশ করে; চড়াইপাখী বিশ্রদ্ধভাবে ইহাদের ঘরের ছাদে বাসা বাধে। ইহাদের গৃহ পাখাতে ভরা।

 মাঝের ঘরটিতে শাদা কাপড় দিয়া ঢাকা একটা তক্তাপোষ রহিয়াছে। যাঁহারা এখানে আসিয়া মিলিত হন (অনেকেই আসিয়া থাকেন), তাঁহারা এই তক্তাপোষের উপর চক্রাকারে আসনপিড়ি হইয়া বসিয়া আধ্যাত্মিক গুহ্যতত্ত্বসকল নির্ণয় করেন। ইহারা সেই সব চিন্তাশীল ব্রাহ্মণ, যাঁহাদের ললাট হয় বৈষ্ণবচৈহ্নে, নয় শৈবচিহ্নে অঙ্কিত;—যাহারা নগ্ন বক্ষে ও নগ্নপদে গমনাগমন করেন; যাঁহাদের কোমরে শুধু একটা মোটা ধুতি