পাতা:ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ - জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩৪৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩৪০
ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ।

মনুষ্যকেই ভ্রাতা জ্ঞান করিব; কি রাজা, কি সামান্য একজন মজুর, সকলের প্রতিই সমান ব্যবহার করিব; সত্যের অন্বেষণে (জড়বাদীর ভাবে নহে) সাধ্যমত প্রবৃত্ত হইব। ইহা ছাড়া আর কিছুই করিতে হইবে না। এখানে আসিবার সময় তোমার যাত্রাপথে আমাদের যে সকল মাদ্রাজি বন্ধুর সহিত তুমি সাক্ষাৎ করিয়াছিলে, তাঁহাদের বৌদ্ধধর্ম্মের দিকেই একটু বেশী ঝোঁক্‌। আমি জানি, তাঁহাদের আগ্রহহীন ঔদাসীন্যের ভাব তোমার গূঢ়রহস্যগ্রবণ আত্মাকে প্রতিহত করিয়াছিল। কিন্তু আমরা সেই প্রাচীনকালের গুহ্য ব্রাহ্মণ্যধর্ম্মেই শান্তি ও আলোক লাভ করিয়াছি। মানুষের পক্ষে যতদূর জানা সম্ভব−সত্যের সেই উচ্চতম ভাব উহারই মধ্যে নিহিত।

 “আমাদের খুবই ইচ্ছা, আমরা যে পথ অনুসরণ করিতে চেষ্টা করিতেছি, পথপ্রদর্শক হইয়া তোমাকেও সেই পথে লইয়া যাই। ‘দ্বাররক্ষকে’র সেই পুরাতন রূপককাহিনীটি বোধ হয় তুমি জান; নবদীক্ষার্থীকে ভয় দেখাইবার জন্য ভীষণ রক্ষকসকল, দীক্ষার আরম্ভকালে, দেবালয়ের দ্বারদেশে বিচরণ করে। উহার প্রকৃত তাৎপর্য এই−জ্ঞানোদয়ের আরম্ভে, স্বভাবতই নানা প্রকার বিভীষিকা দেখা যায়। আমাদের বিশ্বাস এই,−মানুষের সমস্ত ব্যক্তিগত অংশ ক্ষণস্থায়ী ও মায়াময়। তোমার মত যে-সব লোকের ব্যক্তিত্বের ভাব অতীব তীব্র, তাহাদের পক্ষে সিদ্ধিলাভ করা বড়ই কঠিন। আমরা আরো অনেক কথা বিশ্বাস করি, যাহা তোমার লৌকিক সংস্কারের সম্পূর্ণ বিপরীত। যে সকল আশা তোমার অজ্ঞাতেও তুমি গৃঢ়রূপে এখনো তোমার অন্তরে পোষণ করিতেছ, সেই সকল আশা যদি আমরা তোমার মন হইতে উঠাইয়া লই, তাহা হইলে তুমি কি আমাদিগকে অভিশাপ করিবে না?”

 “না। আশার কথা যদি বলেন, সে পক্ষে আমার আর কি হারাইবার নাই।”

 “বেশ, তা হ’লে তুমি আমাদের নিকটে এস।”