পাতা:ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ - জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩৪৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩৪২
ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ।

 প্রত্যেকেই, গঙ্গাদেবীকে পুষ্পমাল্যের উপহার,—কেবলই পুষ্পমাল্যের উপহার দিতেই ব্যস্ত;—পূর্ব্বপূর্ব্ব দিনের উপহারগুলি—যাহা এখনও জলে ভাসিতেছে—তাহাই যেন যথেষ্ট নহে। জুঁইফুলে-গাঁথা গড়েমালা,—দেখিতে আমাদের মহিলাদের গলায় জড়াইবার পালক্‌আচ্ছাদনের মত; অন্যান্য শাদা ফুলের মালায় সোনালি হল্‌দে ও জাফ্রানি হল্‌দে এমনভাবে মিশ্রিত, যাহাতে বিভিন্ন আভার বৈষম্য বেশ ফুটিয়া উঠে; ভারতরমণীরা তাহাদের ওড়নাতেও এইরূপ রং মিলাইতে ভালবাসে।

 গৃহপ্রাসাদাদির সমস্ত ‘কার্নিস’-ঝালরের উপর যে-সব পাখীর ঝাঁক দীর্ঘরজ্জুর মত সারি-সারি বসিয়া ঘুমাইতেছিল, তাহারা জাগিয়াছে—কলরবে ও গানে মাতিয়া উঠিয়াছে।

 ঘুঘু ও অন্যান্য ক্ষুদ্রপক্ষী স্নানের জন্য, আত্মবিনোদনের জন্য দলে-দলে আসিয়া বিশ্বস্তভাবে এই সব ব্রাহ্মণদের মধ্যে রহিয়াছে; কেন না, জানে, উহারা কখন জীবহত্যা করে না। সমস্ত দেবতার উদ্দেশে প্রভাতসঙ্গীত দেবালয় হইতে নিঃসৃত হইতেছে;—ঝঞ্চা-নাদের মত ঢাকঢোলের বাদ্য, শানাইয়ের কাঁদুনি, পবিত্র তূরীধ্বনি শুনা যাইতেছে। উপরে, সমস্ত জালি-কাটা বলভী, মাল্য-ঝালর ও ক্ষুদ্র স্তম্ভসমন্বিত সমস্ত গবাক্ষ, গৃহের সমস্ত ছাদ, বৃদ্ধদের মস্তকরাশিতে আচ্ছন্ন—ইহারা সেই দর্শকবৃন্দ, যাহারা ব্যাধি কিংবা জরাপ্রযুক্ত নীচে নামিতে অসক্ত অথচ যাহারা এই প্রভাত-আলোকে পূজা-অর্চ্চনায় যোগ দিতে অভিলাষী। সূর্য্যের জ্বলন্ত রশ্মিতে উহারা পরিপ্লাবিত।

 লোকের হস্তধারণ করিয়া হর্ষোৎফুল্ল নগ্ন শিশুর দল নাবিতেছে। যোগী ও অলসগতি সন্ন্যাসীর নাবিতেছে। নিরীহ পবিত্র গাভীবৃন্দ নাবিতেছে—প্রত্যেকেই তাহাদিগকে সসন্ত্রমে পথ ছাড়িয়া দিতেছে এবং তাজা তৃণ ও পুষ্পরাশি তাহাদের সম্মুখে অর্পণ করিতেছে। এই মধুরপ্রকৃতি