পাতা:ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ - জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ত্রিবঙ্কুর-মহারাজের রাজ্যাভিমুখে।
৩১

মাঠ-ময়দান, আঙুর পাকিবার সময়ে,—সেই কনকোজ্জ্বল-ঋতুকালে, Pleron-দ্বীপের সেই শান্তিময় বাড়ীগুলি, আমার মনে পড়ে।

 কিন্তু আবার, মধ্যে মধ্যে অনেক ছোটখাটো জিনিষ পথিমধ্যে উপস্থিত হইয়া আমার এই স্বপ্নের ব্যাঘাত করে। ঐ দেখ, ছয়বৎসরবয়স্কা একটি ছোট বালিকা, আমাকে একটা সংবাদ দিবার জন্য, নিজগ্রাম হইতে প্রেরিত হইয়া এইখানে আসিয়াছে। ইহার কালো রহস্যময় চোখদুটি দীর্ঘায়ত; ইহার নাক্‌ ফুঁড়িয়া চুনি-বসানো একটি সোনার মাক্‌ড়ি আছে; চুনিগুলি দেখিতে শোণিতবিন্দুর ন্যায়।

 দূরে, আমাদের বাড়ীর সংলগ্ন শান্তিময় প্রাকৃতিক দৃশ্যটিকে উদ্বেজিত করিয়া কি-একটা অদ্ভুত জিনিষ গাছের মধ্য হইতে বাহির হইয়াছে;—ব্রাহ্মণিক দেবালয়ের একটি কোণ,—দেবতা ও রাক্ষসাদির মন্দিরস্থ একটি কোণ। মন্দিরটি বিষ্ণুদেবের—গাছপালায় ঢাকা পড়িয়াছে।

 তরুগণের ছায়াসত্ত্বেও, মধ্যাহ্নের সূর্য্য আমাদের এই শাদা বাড়ীটির উপর বাস্তবিকই একটু অতিরিক্ত-পরিমাণে আলোক ও উত্তাপ বর্ষণ করিতেছে।

 ছোট-ছোট ফলবাগানের উপর আলো পড়িয়াছে—খুব উজ্জ্বল আলো পড়িয়াছে। আমাদের সেপ্টেম্বরমাসের দীপ্ততম মধ্যাহ্নও এখানে হার মানে।

 চারিদিক্‌ই নিস্তব্ধ। মেঠো-ঘাসের পথে আর কোন পথিক নাই। বড়বড় হাতপাখাগুলা এখন ঘুমাইতেছে; যে সকল ভারতীয় ভৃত্য ঐ সকল পাখা ব্যজন করিয়া থাকে, তাহারাও ঘুমাইতেছে। সব চুপ্‌চাপ। কোথাও টুঁ শব্দ নাই। কেবল কতকগুলা দাঁড়কাক—যাহাদের দিবানিদ্রা নিষিদ্ধ—তাহারাই আমার কামরায় প্রবেশ করিয়া আমার চারিদিকে কা-কা-শব্দ করিতেছে। এই সকল নিষ্পন্দ পদার্থের মধ্যে, উহাদেরি