পাতা:ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ - জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩৫৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বারাণসীতে যদৃচ্ছাভ্রমণ।
৩৫৫

পাশ ঘেঁষিয়া যাইতেও কেহ সাহস করে না। দোকানে, পিতল কিংবা মার্ব্বেলের পুতুলসকল বিক্রীত হইতেছে;—এখানকার তৈয়ারী বলিয়াই উহাদের বিশেষ মাহাত্ম্য। প্রেতমূর্ত্তি সন্ন্যাসী,—চোখগুলা জলন্ত অঙ্গারের মত—সমস্ত শরীর ভস্মাবৃত, মুখমণ্ডল গুপ্তচিহ্নের দ্বারা অঙ্কিত—শুক্‌ন কাঠের আগুন জ্বালাইয়া তাহার সম্মুখে উবু হইয়া রাস্তার ছায়ায় বসিয়া আছে। তাহাদের পাশ দিয়া যখন চলিয়া গেলাম, অস্থিসার বাহু ধীরে ধীরে উত্তোলন করিয়া তাহারা আমাকে ইঙ্গিতে আশীর্ব্বাদ করিল।

 চারিদিক্‌ রুদ্ধ চত্বরের মত একটা স্থান—তাহার উপর রাশীকৃত প্রাচীর ও ভগ্নাবশেষ স্থাপিত; ইহাই বলিতে গেলে স্বর্ণমন্দিরের অঙ্গন অথবা আধারপীঠ; কিন্তু ইহা ঠিক মন্দিরের সম্মুখে অবস্থিত নহে; মন্দিরের দ্বারদেশে যাইতে হইলে আবার একটা সঙ্কীর্ণ অন্ধকেরে গলির ভিতর দিয়া যাইতে হয়। এই স্থানটি অতীব পবিত্র, সাধুসন্ন্যাসীরা এখানে নিয়ত বাস করে। এখানকার কোন জিনিষ স্পর্শের দ্বারা কলুষিত না হয়, এইজন্য বিদেশীকে সর্ব্বদাই বিশেষরূপে সতর্ক থাকিতে হয়। এখানে-ওখানে, দেয়ালের মধ্যে খোদিত কুলুঙ্গি রহিয়াছে;—কুলুঙ্গিগুলা জালিকাটা পিতলের কপাটে বদ্ধ—তাহার মধ্যে মসৃণ শিলাখণ্ডসকল সারি-সারি অধিষ্ঠিত, এই শিলাখণ্ডগুলা, জন্ম ও মৃত্যু, এই দুই মহারহস্যের সাঙ্কেতিকমূর্ত্তি। বড়-বড় বন্যপশুকে যেরূপ পিঞ্জরে বদ্ধ করিয়া রাখা হয়, সেইরূপ ধাতুময়-স্থূল-গরাদে-বিশিষ্ট পিঞ্জরসকল ভীষণদর্শন বিগ্রহে পরিপূর্ণ; এবং এক একটা ছায়াময় কোণে,—ন্যাক্‌ড়াকানি ও হল্‌দে ফুলের মালায় পরিবেষ্টিত ভাঙাচোরা ভীষণ গণেশমূর্ত্তি,—ভক্তবৃন্দের ভক্তিপূর্ণ হস্তের ঘর্ষণে ক্ষয় হইয়া গিয়াছে। শুষ্ক ফুলের মালা মাটীর উপর ছড়ান রহিয়াছে; তাহার সহিত বহুবর্ষসঞ্চিত ধূলারাশি মিশিয়াছে। মধ্যে-মধ্যে পবিত্র গরুদের গোময়ের উপর পা পড়িয়া যায়; এই গাভীবৃন্দ সমস্তদিন ইতস্ততঃ জনতার মধ্যে বিচরণ করিয়া সন্ধ্যার সময় আবার