পাতা:ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ - জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩৬১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বারাণসীতে যদৃচ্ছাভ্রমণ।
৩৫৭

একেবারেই সোনার;—খোদাই-কাজ-করা পুরু সোনার পাতে গঠিত; তা, ছাড়া, ইহার একটি অসাধারণত্ব দেখিয়া বিস্মিত হইতে হয়;—এই পুরু, খাদহীন সোনার পাতের যে উজ্জ্বলতা, তাহা যুগযুগান্তরেও ম্লান হয় নাই। কোন কৃত্রিম উপায়ে কোন সোনার কাজে ঐরূপ উজ্জ্বলতার অনুকরণ করা অসম্ভব। এই সকল সোনার কারুকার্য্যের খোঁচ্‌-খাঁচের মধ্যে টিয়ারা বাসা বাঁধিয়া সপরিবারে বাস করিতেছে;—কেহই তাহাদের বাধা দেয় না; উহা যেন পূর্ব্ব হইতেই একপ্রকার বোঝাপড়া হইয়া আছে। স্বর্ণপুষ্প, স্বর্ণপল্লবের মধ্যে এই সকল অসংখ্য টিয়া ঘুরিয়া বেড়াইতেছে; ইহাদের স্বাভাবিক সবুজ রং, সোনার জমির উপর আরও যেন সবুজ দেখাইতেছে।

 প্রায় সকল রাস্তাই গঙ্গায় আসিয়া শেষ হইয়াছে; গঙ্গার ধারে আসিয়া আরও ফলাও—আরও পরিস্ফুট হইয়া উঠিয়াছে; এই গঙ্গার ধারেই বারাণসীর বিরাট্‌ মহিমা যেন সহসা আবির্ভুত,—বড়-বড় প্রাসাদ, দীপ্ত আলোকের তরঙ্গলীলা। এই গঙ্গার জন্যই, নগরের এক প্রান্ত হইতে অপর প্রান্ত পর্য্যন্ত, জম্‌কাল সোপান প্রস্তুত হইয়াছে—সেই সোপান দিয়া গঙ্গার পূতজলে অবতরণ করা যায়; এমন কি, যখন জল শুকাইয়া নদীর তল নিম্ন হইয়া পড়ে (যেমন এই সময়ে), নদীর গভীর গর্ভে নিমজ্জিত ভগ্নাবশেষসমূহ যখন বাহির হইয়া পড়ে, তখনও ঐ সোপান দিয়া নদীর জলে নাবা যায়। সোপান-ধাপের স্থানে-স্থানে ছোট-ঘোট পাথরের ঘর রহিয়াছে, সেইখানে বিভিন্ন মন্দিরের বিভিন্ন দেবতার ক্ষুদ্রাকার মূর্ত্তিসকল প্রতিষ্ঠিত। প্রতিবর্ষ বর্ষাগমে এই সকল মূর্ত্তি জলের মধ্যে দীর্ঘকাল নিমজ্জিত থাকে এবং জলের বেগকে আট্‌কাইবার জন্য এই সকল ক্ষুদ্র মূর্ত্তি গুরুপিণ্ডাকারে নির্ম্মিত হইয়াছে।

 এই নদীই বারাণসীর জীবন—বারাণসীর মাহাত্ম্যের মুখ্যহেতু। কি প্রাসাদ, কি অরণ্য—সকল স্থান হইতেই লোকেরা এই জাহ্নবীর পুণ্যতীরে