পাতা:ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ - জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩৬৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩৬০
ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ।

ভবিষ্যতে তাঁহাদের সহিত পুনর্ম্মিলিত হইব—কিংবা আরও ঠিক করিয়া বলিতে গেলে—তাঁহাদের সহিত একেবারে মিশিয়া যাইব—এই কল্পনাটি এখন আমি মানিয়া লইয়াছি। এইরূপ যে মিশিয়া যাইব, তাহা মৃত্যুর পরক্ষণেই নহে, কিন্তু হয় ত যুগ-যুগান্তরের পর। তাছাড়া, এই যুগযুগান্তর-কালও বিভ্রমাত্মক,—সুতরাং উহার সহিত বর্ত্তমান জন্মের ক্ষণিক জীবনের যতটুকু সম্বন্ধ সেইটুকু কালই আমরা উপলব্ধি করিতে পারি।

 আমি জানি, এই সন্ন্যাস বৈরাগ্যের ভাব আমার মন হইতে চলিয়া যাইবে; এই তত্ত্বজ্ঞানীদের গৃঢ় প্রভাব হইতে দূরে সরিয়া গেলেই, আবার আমি জীবন পাইব, কিন্তু পূর্ব্বেকার মত নহে; আমার আত্মার অন্তরের মধ্যে যে বীজ উপ্ত হইয়াছে, তাহা অঙ্কুরিত হইয়া আবার আমার জীবনকে আচ্ছন্ন করিবে,—সম্ভবত আবার আমাকে বারাণসীতে ফিরিয়া আনিবে। এতদিন পৃথিবীতে যে কাজ করিয়াছি, যে ভাবে জীবন কাটাইয়াছি, এখন তাহার দীনতা ও ব্যর্থতা উপলব্ধি করিতেছি; রূপ ও রঙে আমি উন্মত্ত ছিলাম, পার্থিব জীবনে যারপরনাই মুগ্ধ ছিলাম; যাহা কিছু ক্ষণভঙ্গুর তাহাকে আটকাইয়া রাখিতে—যাহা কিছু অস্থায়ী তাহাকে ধরিয়া রাখিতে, আমার প্রাণপণ চেষ্টা ছিল।

 আজ রাত্রে আমি তত্ত্বজ্ঞানীদের গৃহ হইতে চলিয়া যাইব; উহার বাহ্য আকর্ষণে আমি চিরমুগ্ধ—না জানি আবার কোন্ দিন উহার আকর্ষণে আকৃষ্ট হইয়া এখানে আসিব।

 লক্ষ্যহীন হইয়া বাবাণসী নগরে ইতস্ততঃ পর্যটন করিতে করিতে, এইবার দৈবক্রমে নর্ত্তকী ও বেশ্যাদিগের অঞ্চলে আসিয়া পড়িয়াছি। বাড়ীর নীচের তালায় অসংখ্য ছোট ছোট দোকান; সেখানে চুমকিবসানো মল্‌মল, জরির মল্‌মল, বংকরা মল্‌মল বিক্রীত হইতেছে; দোকানীরা এই মাত্র প্রদীপ জ্বালিয়াছে। রাস্তার এক প্রান্ত হইতে অপর প্রান্ত পর্য্যন্ত সমস্ত বাড়ীর উপরকার তালাগুলি সোহাগ-লালিতা তিমিরাশ্রিতা ললনাদের