পাতা:ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ - জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩৬৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
যে প্রস্তর-পীঠের উপর বুদ্ধদেব বসিয়াছিলেন।
৩৬১

বাসস্থান; নৈশ বেশ্যাবৃত্তির জন্য উহারা অত্যুজ্জ্বল বেশভূষায় সজ্জিত হইয়া, গবাক্ষের সম্মুখে, বারাণ্ডার ধারে বাহার দিয়া বসিয়াছে; পশ্চাদ্ভাগে উহাদের দীপালোকিত ঘরগুলি দেখা যাইতেছে, শিশু-রুচিসুলভ প্রাচুর্য্য সহকারে অসংখ্য ঝাড়লণ্ঠন কড়িকাঠ হইতে ঝুলিতেছে। ঘরের চুনকাম-করা শাদা দেয়ালে গণেশের চিত্র, হনুমানের চিত্র, কিংবা রক্তাপ্লুতা কালীর চিত্র রহিয়াছে। বেশ্যাদিগের নগ্ন বাহুতে, কর্ণযুগলে, নাসারন্ধ্রে,—বলয়াদি ও বিবিধ রত্নরাজি ঝিক্‌মিক্‌ করিতেছে। তীব্রগন্ধী পুষ্পমালা বহু-স্তবকে বক্ষের উপর ঝুলিতেছে। প্রভাতে গঙ্গাতীরে যে সকল দুরধিগম্যা ব্রাহ্মণ-কন্যাকে দেখা যায় তাহাদেরই মত ইহাদের একই প্রকার মখমল-কোমল নেত্র, বোধ হয় তাহাদেরই মত একই প্রকার উজ্জ্বল শ্যামল গাত্র,—সহসা বিভ্রম জন্মিতে পারে...


যে প্রস্তর-পীঠের উপর বুদ্ধদেব বসিয়াছিলেন।

 যে প্রস্তর-পীঠের উপর বুদ্ধদেব বসিয়াছিলেন সেই পীঠটি দেখাইবার জন্য আমার বন্ধু আমাকে সহরের বাহিরে, পল্লীর মাঠময়দানের দিকে লইয়া গেলেন। পথে যাইতে যাইতে, সেই মেঠো নিস্তব্ধতার মধ্যে আমরা অলৌকিক তত্ত্ব সম্বন্ধে আলাপ করিতে লাগিলাম।

 বারাণসীর পল্লীভূমি অতীব নির্জ্জন, প্রশান্ত, এবং গোপজীবন-সুলভ শান্তি-রসাশ্রিত। কতকগুলি যব ও ধান্যের ক্ষেত দেখা যাইতেছে; এখন ফেব্রুয়ারী মাস—ইহার মধ্যেই শস্যাদি পাকিয়াছে, গাছপালা সবুজ হইয়া উঠিয়াছে; এইরূপ না হইলে, কতকটা ফ্রান্‌সের ক্ষেত্রভূমি বলিয়া মনে হইত। রাখালেরা বেণু বাজাইতে বাজাইতে গো মহিষ ও ছাগল চরাইতেছে। বনভূমির কোণে, কতকগুলি পুরাতন পবিত্র শিলাখণ্ড রহিয়াছে,—সেইখান দিয়া যাইবার সময়, কোন ভক্ত কৃষক উহার উপর একটা হল্‌দে ফুলের মালা ফেলিয়া গিয়াছে; এই সকল