পাতা:ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ - জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩৬৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩৬৪
ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ।

চক্রাকৃতি পাথুরে জায়গা; এইখানে একজন রাখাল বাঁশি বাজাইতেছে, আর সেই বংশী-ধ্বনির সঙ্গেসঙ্গে ছাগেরা একপ্রকার সূক্ষ্ম তৃণ চর্ব্বণ করিতেছে। এইখানে কতকগুলা বড় বড় গাছ আছে, দূর হইতে আমাদের ওকগাছ বলিয়া ভ্রম হয়—এই সব গাছের ছায়ার মধ্যে একটা বহু পুরাতন কালো পাথরের পীঠ আছে; আমি ও পণ্ডিত এই প্রস্তরপীঠের উপর ভক্তিভাবে বসিলাম। দুই সহস্র বৎসরের অধিক হইল, বুদ্ধদেব ইহার উপর বসিয়া তাঁহার প্রথম উপদেশ বিবৃত করিয়াছিলেন। কিয়ৎ শতাব্দি হইতে, বৌদ্ধধর্ম্ম এই সমস্ত প্রদেশ হইতে অন্তর্হিত হইয়া, সুদূর প্রাচ্য ভূখণ্ডে বিস্তারলাভ করিয়াছে। এখন এই পুরাকালের পূণ্যভূমিতে ভারতবাসিগণ আর আইসে না। কিন্তু ইহার পরিত্যক্ত অবস্থা সত্ত্বেও, এই প্রস্তর-পীঠটি এখনও বহুসহস্র মনুষ্যের কল্পনার সামগ্রী হইয়া রহিয়াছে। সুদূর চীনে, জাপানের দ্বীপপুঞ্জে, শ্যামের অরণ্যে, দুর্ব্বোধ্য পীত মস্তিষ্কসকল এই ঔপন্যাসিক আসন-পীঠের ধ্যান করিতেছে। কখনও কখনও সেখান হইতে তীর্থ যাত্রীরা পদব্রতে যোজন যোজন পথ অতিক্রম করিয়া, এইখানে আগমন করে এবং নতজানু হইয়া এই পীঠকে চুম্বন করে। এই গোপভূমিসুলভ শান্তির মধ্যে, এই রমণীয় নিস্তব্ধতার মধ্যে, আমি ও পণ্ডিত আমরা দুজনে ব্রাহ্মণ্যিক তত্ত্ব সম্বন্ধে বিশ্রম্ভালাপ করিতেছি।

 প্রাচীন ও হৃদয়হীন তত্ত্বজ্ঞানের উদ্দীপক এই পীঠের অনতিদূরে, ক্ষুদ্র পর্ব্বতের ন্যায় গুরুপিণ্ডাকৃতি একটা স্তূপ উঠিয়াছে—এক সময়ে উহা বহুল কারুকার্য্যে ভূষিত ছিল; কিন্তু দুই সহস্র বৎসর পরে এখন উহার খোদাই কাজগুলি ক্ষয় হইয়া গিয়াছে—এবং উহার আপাদ মস্তক, তৃণ ও কণ্টকগুল্মে আচ্ছন্ন হইয়াছে। পুরাতন বারাণসীতে যে বৌদ্ধমন্দির সর্ব্বপ্রথমে নির্ম্মিত হয়, ইহাই তাহার ধ্বংসাবশেষ। এই প্রকাণ্ড স্তূপের ভিতর-দেয়াল মনুষ্যপ্রমাণ উচ্চ; ইহার সমস্ত বহিঃপ্রসারিত