পাতা:ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ - জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩৬৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
যে প্রস্তর-পীঠের উপর বুদ্ধদেব বসিয়াছিলেন।
৩৬৫

অংশগুলি ইহার সমস্ত ক্ষয়গ্রস্ত প্রস্তর, সূক্ষ্ম স্বর্ণপত্রে মণ্ডিত; এবং উহা এই জরাজীর্ণ অবস্থাতেও অপূর্ব্ব ও অভাবনীয় উজ্জ্বলতা ধারণ করিয়া রহিয়াছে। চীনবাসী, অ্যানামাবাসী, ব্রহ্মবাসী তীর্থযাত্রীগণ তাহাদের নিজ নিজ দূর-দেশ হইতে স্বর্ণপত্র আনিয়া উহার গায়ে লাগাইয়া দেয়; এবং যাহা তাহাদের চিরধ্যানের বস্তু তাহাকে প্রত্যক্ষ দর্শন করিয়া এইরূপভাবে ভক্তিউপহার প্রদান করা উহারা কর্ত্তব্য জ্ঞান করে। বড়লোকদিগের সহিত সাক্ষাৎ করিতে হইলে যেরূপ তাহাদের নিকট নিজের নাম লিখিয়া পাঠাইতে হয়—এই স্বর্ণপত্রগুলি, এই অবজ্ঞাত উপেক্ষিত পুরাতন পুণ্যপীঠের হস্তে অর্পিত একপ্রকার “সাক্ষাৎকার-পত্র” বলিলেও চলে।

 দিবাবসানে, আবার বারাণসীনগরে ফিরিয়া আসিয়া আমার ভ্রমণ সহচর তাঁহার এক বন্ধুর বাগানবাটীতে গাড়ী থামাইলেন। ইনিও তাঁহারই ন্যায় জাতিতে ব্রাহ্মণ, দর্শনশাস্ত্রে ও সংস্কৃত ভাষায় সুপণ্ডিত। ফলাদি আহার ও জল পান করিবার জন্য আমাকে তিনি সেইখানে লইয়া গেলেন। (বলা বাহুল্য, একজন ম্লেচ্ছ সঙ্গে আছে বলিয়া, তিনি স্বয়ং খাদ্যপানীয় গ্রহণ পক্ষে বিশেষ সতর্ক ছিলেন।) বাড়ীটি পুরাতন কিন্তু অতীব রমণীয়। ইহার সংলগ্ন একটি উদ্যান আছে—উদ্যানের রাস্তাগুলি একেবারে সোজা, আমাদের অনুকরণে ধারে ধারে চির-হরিৎ তরুরাজি এবং ফ্রান্সের সেকেলে বাগানের মত, ফোয়ারা-বিশিষ্ট জলের চৌবাচ্চা রহিয়াছে; আমাদের দেশের গোলাপাদি ফুলও রহিয়াছে; শীতের প্রভাবে কতকগুলা গাছ পত্রহীন হইলেও,—এই সকল ফুল, এই বায়ুর উত্তাপ, এই সকল হল্‌দে পাতা দেখিয়া মনে হয় যেন গ্রীষ্মঋতু শেষ হইয়া আসিতেছে, অথবা খর-রৌদ্র শরতের আবির্ভাব হইয়াছে; যেন বৃষ্টির অভাবে এই শরৎ অকালে অবসন্ন হইয়া পড়িয়াছে—আলোকের আতিশয্যে বিষন্নভাব ধারণ করিয়াছে...