পাতা:ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ - জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ত্রিবঙ্কুর-রাজ্যে।
৩৩

এখন যেখানে আমি আছি—এই পূর্ব্বভারত, আর যেখানে যাইতেছি—সেই ত্রিবঙ্কুররাজ্য, এই উভয়ের মধ্যবর্ত্তী এই যে যাতায়াতের পথ—এটি দক্ষিণদিক্‌ দিয়া চলিয়া গিয়াছে। এই সুখের “খয়রাৎ-মহলে” এখনও রেলপথ হয় নাই যে, তদ্দ্বারা পরান্নজীবিদিগের আমদানি হইবে, কিংবা উহার ধনধান্য বিদেশে চলিয়া যাইবে। উত্তর দিক্ দিয়া, খালপথে নৌকাযোগে, ক্ষুদ্ররাজ্য কোচিনের সহিত উহার যোগাযোগ আছে। এই খাল-বিল অনেকগুলি। তা ছাড়া, আত্মরক্ষণ-উপযোগী ইহার কতকগুলি প্রাকৃতিক সুবিধা ও আছে,—তদ্দ্বারা বাহিরের সংস্পর্শ হইতে স্থানটি সুরক্ষিত।

 ইহার পশ্চিমে বন্দরহীন সমুদ্র, দুরধিগম্য সৈকতবেলাভূমি—যাহার উপর ফেনময় তরঙ্গরাজি অবিরাম ভাঙিয়া পড়িতেছে। যাহা ভারতের একপ্রকার মেরুদণ্ড বলিলেও হয়,—সেই “ঘাটের”র গিরিমালা পূর্ব্বদিকে অবস্থিত;—উহার শৈলচূড়া, উহার অরণ্য, উহার ব্যাঘ্রাদি হিংস্রজন্তু, কতকটা প্রহরীর কার্য্য করিতেছে।

 আমার গাড়ীর বলদদুটি কখন দুল্‌কি-চালে, কখন বা ছুটিয়া চলিতেছে। যেই একটা গ্রাম পার হইতেছি, অমনি আবার দীর্ঘপথ আরম্ভ হইতেছে —বৈচিত্রহীন, অফুরন্ত। সূর্য্য জলন্ত কিরণ বর্ষণ করিতেছে। পথের দুই ধারে যে বৃক্ষগুলি সারি-সারি চলিয়াছে, উহা দেখিতে কতকটা আমাদের আখ্‌রোট্‌ ও “অ্যাশ্‌”-গাছের মত। যেগুলিকে আখ্‌রোট্‌-গাছের মত বলিতেছি উহা আসলে তরুণ বটবৃক্ষ,—কালসহকারে প্রকাণ্ড হইয়া উঠিবে। শিকড়ের জটা স্থানে-স্থানে বাহির হইতে সুরু করিয়াছে; উহার ফ্যাঁক্‌ড়াগুলি মাটির দিকে নামিতেছে; তাহা হইতে আবার নূতন ফ্যাঁক্‌ড়া বাহির হইয়া চারিদিকে বিস্তৃত হইবে।

 এই দুই-সারি, বৃক্ষের মধ্য দিয়া আমরা সুবিস্তৃত কান্তারভূমি অতিক্রম করিয়া চলিয়াছি। মধ্যে-মধ্যে বিরলসন্নিবেশ তাল-নারিকেল দৃষ্ট হইতেছে।

 দেখিবার জন্য ও নিশ্বাস ফেলিবার জন্য গাড়ির পার্শ্বদেশে ছোট-ছোট