পাতা:ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ - জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩৭২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩৬৮
ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ।

গলায়, এক ছড়া জুঁইফুলের মালা নিঃক্ষেপ করিলেন, ধ্যানবিহ্বল অতীব মধুর দৃষ্টিতে মুহূর্ত্তকাল আমার দিকে চাহিয়া দেখিলেন, তাহার পর বাহুর দ্বারা একটা ইঙ্গিত করিয়া, আবার ধ্যানে নিমগ্ন হইলেন। “যদি ইচ্ছা হয়, এইখানে বসে ধ্যান কর।” তাঁহার চির-অবারিত গৃহের সেকেলে ধরণের থামের মধ্য হইতে, নিম্নস্থ গঙ্গার-উপর আমাদের দৃষ্টি নিপতিত হইতেছে—পরপারের বিশাল সমভূমি দেখা-যাইতেছে—সেই মরুভূমি, যাহা এখনও নৈশ বাষ্পজালে আচ্ছন্ন; এবং তাহারই পশ্চাৎ হইতে যাদুকর সূর্য্য ধীরে ধীরে উদিত হইতেছেন! পার্শ্ববর্ত্তী আর একটি চতুষ্কমণ্ডপ, যাহা এই চতুষ্কের উপর ঝুঁকিয়া রহিয়াছে, এবং যেখান হইতে এই চতুষ্কটি দেখা যায় সেইখানে গঙ্গাদেবীর উদ্দেশে, বারাণসীর সমস্ত দেবদেবীর উদ্দেশে, প্রভাত-সঙ্গীত ধ্বনিত হইতেছে; স্তম্ভশ্রেণীর মধ্য হইতে, উদয়াচলের দিকে মুখ করিয়া কতকগুলা দীর্ঘ তূরী বন্যপশুর ন্যায় বিকট গর্জ্জন করিতেছে; এবং এই কর্ণবধির ভীষণ কোলাহলে যোগ দিয়া ঢাক-ঢোল ভিতর হইতে বাজিতেছে।

 আমি প্রতিদিন প্রাতে যাহা করিয়া থাকি, আজও সেইরূপ, বারাণসীর দস্তুর অনুসারে নদীতে নামিলাম। এই সময়ে আমার নৌকা আমার জন্য প্রতিদিন অপেক্ষা করিয়া থাকে।

 প্রথমে, শ্মশান-ভূমির সম্মুখ দিয়া আমাকে যাইতে হইবে। যদিও কিছু দিন হইতে, এই পবিত্র নগরে মারাভয় দেখা দিয়াছে, তবু একটা বই শব নাই; এই মৃতদেহটি তীরের উপর শয়ান থাকিয়া আ-কটি গঙ্গার জলে নিমজ্জিত রহিয়াছে। কিন্তু আরও কতকগুলা মৃতদেহ আজ রাত্রে নিশ্চয়ই পোড়ান হইয়াছে; কেননা, মাটির উপর কতকগুলা ধূমায়মান চেলাকাঠ, সম্মুখে খানিকটা জল,—মানব-অঙ্গারে সমস্ত কালো হইয়া গিয়াছে, বিষ্ঠা ও গলিত আবর্জ্জনার সহিত স্নানশুষ্ক পুষ্পমালা সেই জলে ভাসিতেছে। সন্ন্যাসীর সেই মৃতদেহটা বরাবর একইভাবে এইখানে