পাতা:ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ - জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩৭৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
অন্য প্রভাত।
৩৬৯

খাড়া হইয়া রহিয়াছে; বাহুদ্বয় আড়াআড়িভাবে স্থাপিত, মস্তক অবনত, অঙ্গুলীর মধ্যে থুতী রক্ষিত, ধূসর চূর্ণে দেহ আচ্ছন্ন থাকায় মনে হইতেছে যেন গ্রীশ দেশের কোন পিত্তল-প্রতিমূর্ত্তি পৃথিবীতে বেড়াইতে আসিয়াছে; কিন্তু দীর্ঘকেশকলাপ লালরঙ্গে রঞ্জিত এবং মস্তক জুঁইফুলের মুকুটে বিভূষিত।

 এই সব ফুলের মধ্যে, এই সব হল্‌দে ফুলের মালার মধ্যে, স্ফীত শবদেহ—জলমগ্ন গরু, মৃত কুক্কুরসকলও ভাসিতেছে এবং গঙ্গার পুরাতন পুতিগন্ধে এই চমৎকার স্বচ্ছ বায়ু পূর্ণ হইয়া রহিয়াছে; এই পূতিগন্ধ,—গোলাপী প্রভাতের মায়ারাজ্যের মধ্যে, মৃত্যুর ভাবকে আনিয়া বসাইয়াছে ও সযত্নে রক্ষা করিতেছে।

 মনে হইতেছে যেন বসন্ত আগতপ্রায়; প্রথমে যখন এখানে আসি, তখন শীতের লক্ষণ সকল দেখা দিয়াছিল, এখন সে সব লক্ষণ আর দেখিতে পাই না। এখন প্রভাতে, একপ্রকার নূতনতর অবসাদ অনুভব করা যায়; মনে হয়, নদীর জলও যেন একটু গরম হইয়াছে; ভারতের সূক্ষ্ম মলমল্‌-শাড়ী-পরিহিতা, দীর্ঘকুন্তলা স্নান-রতা রমণীগণ গঙ্গার জলে আজকাল একটু বেশীক্ষণ থাকিতেছে। স্নানার্থী ছোট ছোট পাখীর ঝাঁকে নদী আচ্ছন্ন; পায়রা, চড়াই, সকল রঙেরই পাখী দলে দলে থাকিয়া, পূজা-রত ব্রাহ্মণদের মধ্যে ঝাঁপাইয়া পড়িতেছে; তাহাদের চক্‌চকে পিত্তল-ঘটির উপর, তাহাদের ফুলের মালার উপর আসিয়া বসিতেছে; নৌকার সমস্ত কাছির উপর পায়ের নখ বাধাইয়া রহিয়াছে এবং পূর্ণকণ্ঠে গান করিতেছে। পবিত্র গাভীগুলা এখন আরও অলস হইয়া পড়িয়াছে, ঘাটের সিঁড়ির নীচে রদ্দুরে আরামে শুইয়া আছে; এইখানে বালকেরা আসিয়া উহাদিগকে আদর করিতেছে, তাজা ঘাস দিতেছে, সবুজ খাক্‌ড়া দিতেছে।

 প্রতিদিনের ন্যায় আজও সমস্ত বারাণসী এইখানে উপস্থিত; সমস্ত