পাতা:ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ - জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩৭৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩৭০
ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ।

নগ্ন-গাত্র লোক, উচ্চবর্ণের সমস্ত পিত্তল-মূর্ত্তি,—তটস্থ বিশাল সোপানধাপের উপর, অপূর্ব্ব আতপত্রের ছায়াতলে, যেখানে ষড়্‌ভুজ দেবতারা বাস করে সেই প্রস্তরের চতুষ্কমণ্ডপের মধ্যে, অথবা ভরপূর রদ্দুরে, ভাসন্ত তক্‌তার উপর ও জলের মধ্যে সমবেত হইয়াছে।

 শুধু আমিই গঙ্গার উপর, এই সময়ে আরাধনা করিতেছি না, শুধু আমিই স্নান, প্রণতি, জুঁই ও গেঁদা ফুলের নৈবেদ্যদান প্রভৃতি পূজার কোন অনুষ্ঠানই করিতেছি না। প্রত্যেক ডিঙ্গিনৌকার উপর, প্রত্যেক সোপান-ধাপের উপর, প্রতিদিন প্রভাতে এই আনন্দ-উৎসব আরম্ভ হয়; এই ভক্তবৃন্দের মধ্যে আমার কোন স্থান নাই; তাহাদের এরূপ তাচ্ছিল্যভাব, যে, আমার দিকে উহারা একবার চাহিয়াও দেখে না; এখন ভ্রমণের সুবিধা হইয়াছে, ভারতের দ্বার সকলের নিকটেই উন্মুক্ত, পর্য্যটকের বন্যায় বারাণসী এখন পরিপ্লাবিত, কিন্তু এই পর্য্যটকদিগের মধ্যে আমি নগণ্যভাবে চলিয়াছি...আমি প্রথম যখন এখানে আসি, তখন আমি যেরূপ ছিলাম, এখন আর আমি সে-আমি নই; তত্ত্বজ্ঞানীদের গৃহে থাকিয়া, এমন একটি ভাব আমার মনে মুদ্রিত হইয়া গিয়াছে, যাহা কখনই বিলুপ্ত হইবার নহে। আমি “দ্বারদেশের বিভীষিকাগুলা” পার হইয়াছি এবং এক্ষণে শান্তভাবে, আত্মসমর্পণ করিয়া, অভিনব তত্ত্বগুলির ঈষৎ আভাস পাইতেছি। অনেকদিন পর্য্যন্ত অনন্তকালকে আমি উপলব্ধি করিতে পারি নাই, কিন্তু যখন হইতে এই অনন্তকালের মূর্ত্তি, আর এক আকারে, আমার সম্মুখে আবির্ভূত হইল, তখন হইতেই সমস্ত জিনিষেরই ভাব বদলাইয়া গেল,—জীবনের ভাব বদলাইয়া গেল, মৃত্যুরও ভাব বদলাইয়া গেল।

 কিন্তু তবু (তত্ত্বজ্ঞানীদের ভাষা অনুসারে) “জাগতিক মায়ায়’’ এখনও আমি আচ্ছন্ন! সমস্ত পার্থিব ও ক্ষণস্থায়ী বিষয় সম্বন্ধে সন্ন্যাস ও বৈরাগ্যের অঙ্কুর তাঁহারাই আমার অন্তরে নিহিত করিয়াছিলেন।