পাতা:ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ - জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৪০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩৬
ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ।

 একঘণ্টা পরে, সন্ধ্যার সময়, জাগিয়া-উঠিয়া মুমূর্ষু দিবসের অন্তিম ছবিটি দর্শন করিলাম।

 দেখিলাম, “ঘাটের” গিরিমালা হঠাৎ যেন আমার পার্শ্ববর্ত্তী হইয়াছে—যেন এক লম্ফে ৪॥০ক্রোশ পথ লঙ্ঘন করিয়া আসিয়াছে। পশ্চিমদিকের সমস্ত সমভূমি এই গিরিমালায় অবরুদ্ধ।

 অস্তমান সূর্য্যের লোহিত কিরণে দিগন্তপট এখনো অনুরঞ্জিত। ঐ লোহিত দিগন্ত-পটের উপর, এই সুনীল গিরিকায় কেমন পরিস্ফুটরূপে প্রকটিত। উহার শৈলচূড়াগুলির আকার ভারতবর্ষীয় ধরণের; দেখিতে কতকটা মন্দিরাদির চূড়া ও গম্বুজের মত।

 সরু-সরু খুঁটির মত তালগাছ, আর কঠোরদর্শন মুসব্বর-তরু—এখানকার এই একমাত্র বৃক্ষ, মৃত্তিকা হইতে ঊর্দ্ধে উঠিয়াছে; যাহা-কিছু আলো এখনো অবশিষ্ট আছে, সেই আলোকে, ম্লানাভ সোনালি-রঙের আকাশের গায়ে, তাহাদের কালো-কালো কাঠিগুলা সর্ব্বত্র প্রসারিত।

 হঠাৎ অন্ধকার হইয়া পড়িল। এই অন্ধকার একটু বিষাদরঞ্জিত, কেন না, আজ রাত্রে চাঁদ উঠিবে না।

 প্রভাত পর্য্যন্ত এই সঙ্কীর্ণ শবাধারের মধ্যে ঝাঁখানি খাইতে খাইতে কিছুই স্পষ্ট দেখিতে পাই নাই; চক্ষের সমক্ষে সবই যেন বিশৃঙ্খলভাবে প্রতিভাত হইতেছিল।

 পথে যাইতে যাইতে, অন্য গরুর গাড়ি যখনি আমাদের সম্মুখে আসিয়া পড়ে, তখনি গোকণ্ঠের ঘণ্টিকাধ্বনি ও লোকজনের কি ভয়ানক চীৎকারই শুনিতে পাওয়া যায়। সেই গাড়িগুলা এত মন্থরগতি যে, আমাদের পথ হইতে সরিয়া যাইতেও তাহাদের অনেক বিলম্ব হয়। মধ্যে মধ্যে বাহন ও চালক “বদ্‌লি করিবার জন্য, কোন গ্রামের নিকট আমাদের গাড়ি আসিয়া থামিতেছে। গ্রামগুলি রাস্তার ধারে অবস্থিত। গাড়ি হইতে অস্পষ্টরূপে, নিদ্রিত ব্রাহ্মণদিগের আবাস কুটীর দেখা যাইতেছে; সম্মুখে,