পাতা:ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ - জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৪৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ত্রিবঙ্কুর-রাজ্যে।
৩৯

ও দুর্ভেদ্য জটিল অরণ্য ভিন্ন বুঝি আর কিছুই নাই। কিন্তু এখন ছায়াময় পথে অনেক লোকজন দেখা যাইতেছে। আমাদেরই মত, গরুর গাড়ি চড়িয়া কতকগুলি লোক যাইতেছে। গরুর পাল লইয়া রাখাল এবং দ্রব্যসামগ্রীভরা চুপ্‌ড়ি মাথায় করিয়া অগণ্য স্ত্রীলোক সারিসারি চলিয়াছে।

 ইতস্তত একএকটি ছোট প্রস্তরমন্দির;—বহু পুরাতন—খিলান চ্যাপ্টা-পাথরে গঠিত; ইহাদিগকে মিশরদেশীয় স্মৃতিমন্দিরের ক্ষুদ্র নমুনা বলিয়া মনে হয়।

 আবার, প্রকাণ্ড বটবৃক্ষের তলে, মুসলমান ফকিরের একটি সমাধিস্থান; উহা শুধু বার্দ্ধক্যের বলে পূজাস্পদ হইয়া উঠিয়াছে। উহা টাট্‌কা ফুলের মালায় সজ্জিত। আর, একটি গজমুণ্ডধারী গণেশমূর্ত্তি দেখিলাম; সেঁউতি ও গোলাপের মালা গাঁথিয়া, কোন ভক্তজন উঁহার কণ্ঠে পরাইয়া দিয়াছে।

 ইহা বড়ই আশ্চর্য্যের বিষয়—অথবা আমার চক্ষেরই ভ্রম—রাস্তায় এতগুলি স্ত্রীলোক দেখিলাম, কিন্তু উহাদের মধ্যে একটিকেও দেখিতে ভাল নয়, অথচ পুরুষেরা অধিকাংশই দেখিতে সুন্দর। পুরুষের মুখে তাম্রবর্ণ যেরূপ মানাইয়াছে, রমণীর মুখে সেরূপ মানায় নাই। পুরুষের ওষ্ঠস্থূলতা পুরুষের গোঁফে ঢাকিয়া যায়, কিন্তু স্ত্রীলোকদিগের অনাবৃত ওষ্ঠের স্থূলতা আরও বেশি বলিয়া মনে হয়। যাহাদের দেহগঠন গ্রীশীয় রমণীমূর্ত্তির ন্যায় অনিন্দ্যসুন্দর—এরূপ কতকগুলি বালিকা ছাড়া প্রায় আর সকলেরই উদরদেশ অকালবৈরূপ্য প্রাপ্ত হইয়াছে। তা ছাড়া, এমন কোন বস্ত্রাবরণও নাই, যাহাতে ঐ অধোলম্বিত উদর কোনপ্রকারে ঢাকিয়া রাখা যাইতে পারে। উহারা নাক ফুঁড়িয়া সোনার নথ ও কান ফুঁড়িয়া কানবালা পরিয়া থাকে। কানবালাগুলি ওজনে এত ভারি যে, উহাতে কান একেবারে ঝুলিয়া পড়ে। তবে কিনা, উহারা ‘পারিয়া’-রমণী; উচ্চশ্রেণীর