পাতা:ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ - জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৪৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৪৪
ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ।

দেখিতে সারি-সারি তাল-নারিকেলের মধ্য দিয়া সহজভাবে ও দ্রুতগতি চলিতে কি উন্মাদক আনন্দ! রজনীর সুমধুর বায়ুরাশি ভেদ করিয়া, সমস্তক্ষণ পুষ্পসৌরভ আঘ্রাণ করিতে করিতে আমরা যেন অফুরন্ত কোন একটি পরী-উদ্যানের মধ্য দিয়া চলিয়াছি।

 আবার বাদ্যধ্বনি; আবার মশালের রক্তিম অনলশিখা। এত অধিক রাত্রি, আর এই ঘোর নিস্তব্ধ সময়, তবু এখনো আর একদল বরযাত্রী এই পথ দিয়া চলিয়াছে। এবার বরটি অশ্বারূঢ়! উহার জরির জামাজোড়া অশ্বের পশ্চাদ্ভাগ পর্য্যন্ত বিস্তৃত। বেশভূষায় বরটিকে রাজার মত দেখিতে হইয়াছে। এখন রাত্রি প্রায় একটা। যে সকল তালবৃক্ষের পরস্পরবিজড়িত শাখাপক্ষপুঞ্জ আমাদের মাথার উপর দিয়া ছুটিয়া চলিয়াছিল, এক্ষণে হঠাৎ যেন তাহাদের গতিরোধ হইল। এটি অরণ্যের একটি ফাঁকা জমি। আমরা ক্রমে একটা পাকা-রাস্তার উপরে আসিয়া পড়িলাম।

 মনে হইতেছে, যেন এই রাজপথটি গভীর নিদ্রায় নগ্ন। চন্দ্রহীন রাতে, গ্রীষ্মপ্রধান দেশে, তারকারাজি যে শীতল-শান্ত ভস্মাভ আলোক বিকীর্ণ করে, সেইরূপ আলোকে এই রাস্তাটি আলোকিত। যে সকল বাড়ী দিবসে ধব্‌ধবে শাদা দেখাইবার কথা, এই রাত্রিকালে তাহারা একটু যেন নীলাভ বলিয়া মনে হইতেছে। বারাণ্ডার ঊর্দ্ধে আর একটি তলা আছে, তাহাতে মিশ্রধরণের ছোট-ছোট থাম; এবং কৌণিক খিলানের আকারে, ত্রিপত্রের আকারে, ঝালোরের আকারে খুব ছোট-ছোট রন্ধ-গবাক্ষ। নীচে, রুদ্ধদ্বারের দুই পার্শ্বে, দেয়ালের কুলুঙ্গিতে, ভূতপ্রেতের প্রবেশনিবারণার্থ সলিতা-বিশিষ্ট ছোট-ঘোট প্রদীপ জোনাকির মত মিট্‌মিট্‌ করিয়া জ্বলিতেছে।

 কতকগুলি পরিচিত জীবজন্তু নিষ্পদভাবে সিঁড়ির ধাঁপের উপর শুইয়া আছে। উহাদের প্রতি কে-যেন-কি অনিষ্টাচরণ করিবে, এইরূপ কোন অনির্দ্দিষ্ট আশঙ্কায়, উহারা যেন মানব-আবাসের যতদূর-সম্ভব