পাতা:ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ - জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৫৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৫০
ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ।

আমি অনুভব করিতেছি এবং উহার মহারহস্য আমার চিত্তকে সততই বিক্ষুব্ধ করিতেছে।

 নগরের এই নব অঞ্চলটির বাহিরে, যে সুবিস্তৃত পরিসরের মধ্যে সমস্ত নীচজাতীয় হিন্দুরা বাস করে, তাহার উপর তালতরুর হরিৎ খিলান প্রসারিত। বাঁশের ছোট-ছোট বাড়ী, পাথর ও খড়-পাতার ছোট-ঘোট পুরাতন দেবালয়, সেই চিরন্তন নারিকেলপুঞ্জের মধ্যে অর্দ্ধপ্রচ্ছন্ন; এই স্থানটি ছায়ার রাজ্য এবং ইহার বীথিগুলি তমসাচ্ছন্ন উদ্ভিজ্জের ঢাকাবারা -পথ বলিয়া মনে হয়।

 কেবল একটিমাত্র রীতিনত রাস্তা আছে, সেই রাস্তা দিয়া, নক্ষত্রপরিদৃশ্যমান একটা মুক্তস্থানে আসিয়া পড়িলাম এবং এই রাস্তা দিয়াই ব্রাহ্মণদিগের পবিত্র গণ্ডির দ্বারদেশে উপনীত হওয়া যায়। এই রাস্তাটি বণিকবীথি; নিস্তব্ধপ্রায় এই সে নগর, ইহার যাহা-কিছু চলাচল, যাহা-কিছু কোলাহল সমস্তই এইখানে কেন্দ্রীভূত। সায়াহ্নের এই সময়ে, এই রাস্তাটি লোকাকীর্ণ; এইখানে ঘোড়াদিগকে একটু আস্তে-আস্তে চালাইতে হইল। লোকদিগকে দেখিলে মনে হয়, যেন সব দেবমূর্ত্তি, এমনি সুন্দর মুখশ্রী, এমনি শোভন-গম্ভীর দাড়াইবার ভঙ্গি, এমনি সুগভীর অতলম্প চোখের দৃষ্টি।

 এই লোকদিগের বাহু ও গাত্র সেন তানধাতুতে খোদা—গঠন-উৎকর্যে ও সুচারু ভঙ্গিমায় পুবতন গ্রীসের উৎকীর্ণ-চিত্রমূর্তির সদৃশ।

 সূক্ষ্মরুচি ও মহাগৌরবান্বিত উন্নতপদীর ব্রাহ্মণেরা সাজসজ্জা তুচ্ছ করিয়া, নিকৃষ্টবর্ণের লোকদিগের অপেক্ষা—এমন কি, পারিয়াদিগের অপেক্ষা ও স্বল্পপরিচ্ছদে যাতায়াত করিতেছে। শাদা কাপড়ের ধুতি কোমরে জাড়ানো এবং তাহাই নগ্নবক্ষের উপর, চাপসের মত বক্রভাবে গিয়া কাঁধের উপর পড়িয়াছে; সেই নগ্নবক্ষে ছোট একটা শণ-সূতার দড়ি ভিন্ন আর কিছুই নাই; ইহাই বর্ণভেদের বাহচিহ্ন; জন্মবামাত্রই