পাতা:ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ - জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৫৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৫২
ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ।

 তাহার পর, আমার প্রদর্শকমহাশয় আমাকে কতকগুলি কুম্ভকারের কর্ম্মস্থান দেখাইলেন। এই সকল কারখানা বর্ত্তমান মহারাজার স্থাপিত। এখানে সুন্দর প্রাচীন-ধরণে মৃৎপাত্রাদি প্রস্তুত হয়। আর কতকগুলি কারখানা দেখিলাম, যেখানে রাজপুতানা ও কাশ্মীরপ্রচলিত রঙের অনুকরণে পশমের গালিচাদি তৈয়ারি হয়। অবশেষে কতকগুলি শিল্পশালা দেখিলাম, যেখানে ধৈর্যশালী খোদকেরা নিকটস্থ অরণ্যহস্তীদিগের দন্ত খুদিয়া দেবদেবীর ছোট-ঘোট সুন্দর মূর্তি অথবা চামরের ও ছাতার ডাণ্ডি নির্মাণ করিতেছে।

 কিন্তু এ সব দেখিবার জন্য আমি ত্রিবঙ্কুরে আসি নাই। রাজপ্রাসাদগণ্ডির বাহিরে ও নিষিদ্ধপ্রবেশ বৃহৎ দেবালয়ের অভ্যন্তরে যে সকল ব্যাপার হইয়া থাকে—যাহা নিতান্তই ভারতীয়—যাহা ভারতের একেবারে নিজস্বজিনিস—কেবল তাহাই দেখিবার জন্য আমার মন নিয়ত আকৃষ্ট হয়।...

 ত্রিবঙ্কুরে একটি পশু-উদ্যান আছে; আমাদের য়ুরোপীয় রাজধানী সমূহের পশু-উদ্যানগুলির ন্যায় এটিও সযত্নৱক্ষিত;—ইহাতে হরিণদিগের বিচরণভূমি আছে, কুম্ভীরের চৌবাচ্ছা আছে?—এইরূপ স্থান অতি বিরল; শ্বাসরোধী নিবিড় তালপুঞ্জের ছায়া হইতে বাহির হইয়া এই স্থানটিতে আসিয়া অরণ্য ও জঙ্গলের দূরদৃশ্য একটু দেখিতে পাওয়া যায়। এখানে কতকগুলি শালভূমি আছে, তাহার চারিধারে দুর্লভ গাছের চারা ও বড় বড় বিদেশী ফুলের গাছ লাগানো হইয়াছে। এই অংশটি এমনি ভাবে নির্মিত যে, এখানে বেশ নিরাপদে বিচরণ করা যায়; কেন না, এখানকার তৃণাদি উদ্ভিজ্জ সযত্নে ছাঁটা, এবং যে সকল ব্যাঘসর্পদি হিংস্রজন্তু এখান হইতে হদ্দ ছয়তক্রোশ দূরে, জঙ্গলের মধ্যে মুক্তভাবে বিচরণ করে—এখানে তাহারা পিঞ্জরবদ্ধ। সূর্য্য এখন আর জগৎকে দগ্ধ করিতেছে না—রাত্রিও আসিয়া পড়ে নাই; এই অল্পস্থায়ী মনোহর সময়টিতে একদল ঐক্যতানবাদক, উদ্যানের দ্বারহীন চারিদিক খোলা