পাতা:ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ - জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৫৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ত্রিবাঙ্কুর রাজ্যে।
৫৩

একটি ক্ষুদ্র বিনোদমন্দিরে বাজাইবার জন্য উপস্থিত হইয়াছে। উহারা সকলেই ভারতবর্ষীয়; উহারা য়ুরোপীয় সুর অতি বিশুদ্ধভাবে বাজায়। উদ্যানের বালুকাকীর্ণ সুঁড়িপথগুলিতে, শ্রোতৃবর্গের মধ্যে—কতকগুলি পালা-পাতলা নগ্নগাত্র ব্যক্তি অবস্থিত; শ্বেতজাতীয় দুই-চারিটি খোকাখুকি-(শ্বেতজাতির মধ্যে দুইচারিজনমাত্র এখানে আছে) রং খুব ফ্যাকাসে—ভারতীয় ধাত্রীর ক্রোড়ে অবস্থিত। তা ছাড়া, দেশীয় শিশুও কতকগুলি ছিল—রাজাদের ছেলে; কিন্তু কি দুঃখের বিষয়, এখন তাহারা আর নিজেদের জাতীয় পরিচ্ছদ পরিধান করে না, পরন্তু উদ্ভট-অদ্ভুত পাশ্চাত্যপুতুলের ছদ্মবেশ ধারণ করে; তাম্রবর্ণসত্ত্বেও এই নরপুত্তলিকাগুলি অতি সুন্দর, আর চোখগুলিও খুব বড়-বড় ও কালো মখমলের মত। এই পশু-উদ্যানটি একটু উচ্চভূমির উপর অধিষ্ঠিত হওয়ায়, দূরস্থ ভারতসমুদ্র অল্প অল্প দেখিতে পাওয়া যায়। কিন্তু এ সমুদ্রে জাহাজ নাই; অন্য দেশে সমুদ্র বাহ্যজগতের সহিত গতিবিধির পথ বলিয়াই পরিচিত; কিন্তু এ অঞ্চলের সমুদ্রটি একেবারেই অব্যবহার্য্য ও মনুষ্যের প্রতিকুলাচারী;—যোগ নিবদ্ধ করা দূরে থাকুক, বাহ্যজগৎ হইতে উহা যেন এই দেশকে আরও বেশি পৃথক্‌ করিয়া রাখে। কেন না,এই উপকূলের কোথাও একটি বন্দর নাই; এমন কি, একখানি নৌকাও নাই, ধীবরও নাই, কেবল চারিদিকে দুর্লঙ্ঘ্য বীচিমালা। ত্রিবন্দ্রমের এই ‘সৌখীন’ দিবাবসান-সময়ে, যখন কেবলমাত্র দুইচারিটি বেচারি খোকা-খুকির জন্য ঐকতানবাদ্য বাদিত হয়, তখন ঐ দূরস্থ সমুদ্রের উপচ্ছায়া প্রবাসীর মনে কষ্ট ও বিষাদের ভাব আরো যেন বাড়াইয়া তুলে।

 এক্ষণে সূর্য্যদেব অস্ত গেলেন—বড় শীঘ্র অস্ত গেলেনঃ —ক্ষণেকের জলন্ত মহিমা; দেখিলে মনে হয়, যেন রক্তবর্ণ ভূমির উপর গোলাপি রংমশালের আলো, এবং তৃণপুঞ্জের উপর—দিগন্তর্যাপী দুর্ভেদ্য বনভূমির উপর-সবুজ রংমশালার আলো পতিত হইয়াছে। তাহার পর অতি শীঘ্র