পাতা:ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ - জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৫৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৫৪
ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ।

(সহসা বলিলেও হয়) রাত্রির আবির্ভাব হইল। এখানে দীর্ঘবিলম্বিত গোধূলি নাই—ঠিক সেই একই সময়ে রাত্রি আসিয়া পড়ে—আমাদের দেশের ন্যায় এই সময়টি ঋতুর উপর কোন প্রভাব প্রকটিত করে না। উদ্যানে রাত্রিটা যেন আরো বেশি করিয়া দেখা দিয়াছে—কেন না, ইহার ঝোপঝাড়ের সুঁড়িপথে, তালপুঞ্জের নীচে—চতুর্দিকের সকল স্থানই ইহারই মধ্যে ঘোর অন্ধকারে আচ্ছন্ন। এই সময়ে ব্রহ্মার মন্দির হইতে একটা কোলাহল উখিত হইল; আর সমস্ত অন্যান্য ইতস্ততোবিকীর্ণ মন্দির হইতে, প্রাতঃকালের ন্যায়, আবার শঙ্ঘণ্টা বাজিয়া উঠিল। নারিকেল-তৈল-সিক্ত শতসহস্র প্রদীপ বনভূমিতলে প্রজ্বলিত হইল এবং এই লাল আগুনের আলোকচ্ছটা অন্ধকারাচ্ছন্ন পথসমূহে প্রসারিত হইল।

 প্রাতঃকাল, সাতটা; রাজাদিগের সহিত দস্তুরমত দেখাসাক্ষাৎ করিবার ও তাঁহাদের অভ্যর্থনা গ্রহণ করিবার ইহাই নির্দিষ্ট সময়। যে সময়ে, চিরনিদাঘ ত্রিবন্ধুরের দীপ্যমান প্রখর সূর্য্যরশ্মি দিগন্ত হইতে সুদীর্ঘ সরলরেখায় প্রসারিত হইয়া, পত্রাবরণ ভেদ করিয়া, তালকুঞ্জের মধ্যে প্রবেশ করিল এবং নারিকেল ও সুপারি তরুর শিখরদেশ স্বর্ণাভ গোলাবিরঙে রঞ্জিত করিল, সেই সময়ে, আমি মহারাজার অতিথিস্বরূপে, তাহার সহিত সাক্ষাৎ করিবার জন্য গাড়িতে উঠিলাম। প্রথমে তালজাতীয় তরুমণ্ডপের নীচে দিয়া আমাদের গাড়ি চলিতে লাগিল। একটু পরেই, একটা প্রকাণ্ড সিংহদ্বারের সম্মুখে আসিয়া উপস্থিত হইল। এখানে পৌছিবার প্রথম রাত্রেই, যে তোরণটি পার হইয়াছি বলিয়া মনে করিয়াছিলাম,—ইহা সেই তোরণ। ইহার ভিতর দিয়া একটা চতুষ্কোণ প্রাচীরের মধ্যে আসিয়া পড়িলাম। ইহা যেন একটি নগরের মধ্যে নগর। ইহার মধ্যে নীচজাতীয় লোকেরা প্রবেশ করিতে পায় না।

 এইবার আমার গাড়ি তোরণের মধ্য দিয়া একেবারে সিধা চলিয়া