পাতা:ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ - জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৫৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ত্রিবাঙ্কুর রাজ্যে।
৫৫

গেল। সেইখানে কতকগুলি অস্ত্রধারী সৈনিক তোরণ রক্ষা করিতেছিল। প্রবেশ করিবামাত্র পুণ্যস্থানের বিবিধ নিদর্শন আমার দৃষ্টিপথে পতিত, হইল। আমরা একটা বিস্তীর্ণ সরোবরের ধার দিয়া চলিতে লাগিলাম। সেই সরোবর-জলে আ-কটি-মজ্জিত হইয়া ব্রাহ্মণেরা প্রাতঃস্নান করিতেছে; প্রাচীন প্রচলিত পদ্ধতি অনুসারে পূজার মন্ত্রাদি পাঠ করিতেছে; উহাদের লম্বিত কেশগুচ্ছ বাহিয়া জলবিন্দু ঝরিতেছে; উহাদের আর্দ্র গাত্র সূর্য্যকিরণে, অভিনব পিত্তলসামগ্রীর ন্যায় ঝিকমিক করিতেছে;—মনে হইতেছে, যেন উহারা কতকগুলি জলদেবতা। উহারা স্বকীয় ধ্যানে এমনি নিমগ্ন,আমাদের গাড়ি উহাদের পার্শ্ব দিয়া চলিতেছে, সৈনিকগণ আমাদের সম্মানার্থ তূরীনাদ করিতেছে, জয়ঢাক পিটাইতেছে, তথাপি সেদিকে উহাদের দৃকপাত নাই।

 ইতরসাধারণের অপ্রবেশ্য এই ঘেরটির মধ্যে রাজপরিবারবর্গের নিবাসগৃহ, পাঠশালাসমূহ, আর সেই সর্ব্বপ্রধান মন্দিরটি অধিষ্ঠিত—যাহা আর চারিটি বিরাট অট্টালিকার উপর—সেই দেবমন্দিরের গগনভেদিচূড়াচতুষ্টয়ের উপর—আধিপত্য করিতেছে। এই প্রাসাদের সম্মুখভাগের আকৃতি ও প্রাসাদপ্রাচীরের বহির্ভাগটি যেন একটু বিষাদময়। প্রাসাদদ্বারের উপর দুইটি যুগল কাল্পনিক মূর্তি অধিষ্ঠিত; এই মূর্ত্তি-দুটি ভারতীয়ধরণের। আরো কিছু দূরে, পূর্বদিকের শেষপ্রান্তে, কতকগুলি ‘দ্রাগন’মূর্ত্তি অধিষ্ঠিত—উহা স্পষ্ট চীনদেশীয় বলিয়া মনে হয়।

 সমস্তই অতি উজ্জ্বল বর্ণে রঞ্জিত; এবং বহুবর্ষাবধি ধূলিরাশি সঞ্চিত হইয়া উহাদিগকে পোড়-পোড়া’ ও আরক্তিম করিয়া তুলিয়াছে। কেন, পথগুলির ন্যায়, এদেশে ধূলিও লাল।

 মহারাজার প্রাসাদদ্বারের সম্মুখে, অশ্বারোহী রক্ষিগণ আবার আমার সম্মানার্থ স্কন্ধ হইতে অস্ত্রাদি নামাইয়া লইল। সৈনিকগুলিকে দেখিতে খুক জাঁকালো, বেশ কায়দা-দোস্ত, লাল পাগড়ি-পরা; এবং উহারা