পাতা:ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ - জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৬৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৬৪
ইংরাজ-বর্জিত ভারতবর্ষ।

আয়ত্ত করিবার চেষ্টা করিতেছে;—ইচ্ছা করিলে যেন সে উহাদের ভঙ্গুর ক্ষীণ কণ্ঠযন্ত্রটিকে চূর্ণবিচূর্ণ করিয়া ফেলিতে পারে। “কনিষ্ঠ-গ্রামের” সুরে উহারা যে গান ধরিয়াছিল, সেই গানটিতে, কুপিত কোন দেবতাকে প্রার্থনার দ্বারা প্রসন্ন করা হইতেছে।

 সর্বশেষে, ঐ দলের যে প্রধান গায়ক, এইবার তাহার গাহিবার পালা। ত্রিশবর্ষবয়স্ক যুবাপুরুষ, দেখিতে বলিষ্ঠ, সুন্দর মুখশ্রী। কোন যুবতী কামিনীর বল্লভ আর তাহাকে ভালবাসে না বলিয়া সেই কামিনী আক্ষেপ করিয়া যে গান করিতেছে, সেই গানটি ঐ গায়ক এইবার আমাকে শুনাইবে।

 সে বরাবর ভূতলেই বসিয়া ছিল। প্রথমে সে গানটি মনে-মনে ঠিক করিয়া লইল, পরে, তাহার দৃষ্টি একটু ঘোর-ঘোর ভাব ধারণ করিল। তাহার পরেই সে একেবারে সজোরে গলা ছাড়িয়া দিল। প্রাচ্যদেশীয় শানাই প্রভৃতি যন্ত্রের ন্যায় তাহার কণ্ঠস্বর অতীব তীক্ষ। তার-গ্রামের কতকগুলি সুরের উপর, পুরুষোচিত বল-সহকারে (একটু কর্কশ) উহার কণ্ঠস্বর স্থায়ী হইল। খুব তীব্রভাবে (আমার পক্ষে নূতন) কত মর্ম্ম-বেদনাই প্রকাশ করিল। তাহার মুখে কত দুঃখের ভঙ্গী-তাহার সরু-সরু হস্তে কত কষ্টের সঙ্কোচন প্রকটিত হইতে লাগিল। এই সমস্তই উচ্চাঙ্গ-কলার মধ্যে ধর্ত্তব্য।

 ইহারা মহারাজের খাস্ গায়ক-বাদক। মহারাজা প্রতিদিন রুদ্ধ-প্রাসাদের ঘোর নিস্তব্ধতার মধ্যে, উহাদের সঙ্গীত শুনিয়া থাকেন। তাহার চারিপার্শ্বে ভৃত্যবর্গ মার্জ্জারবৎ নিঃশব্দপদসঞ্চারে ঘুরিয়া বেড়ায় এবং জোড়হস্তে নতশিরে ক্রমাগত প্রণাম করে।••• জীবনের দুঃখযন্ত্রণা, প্রেমের দুঃখযন্ত্রণা, মৃত্যুর দুঃখযন্ত্রণা—এই সম্বন্ধে মহারাজার কল্পনা ও চিন্তাপ্রবাহ আমাদিগের হইতে না-জানি কত ভিন্ন।••• আদব-কায়দার সহিত বিদেশীয় ভাষায়, বাধ-বাধ-ভাবে আমাদের মধ্যে যে কথাবার্তা অল্পক্ষণ