পাতা:ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ - জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৬৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ত্রিবন্ধুর-রাজ্যে।
৬৫

হইয়াছে, তাহাতে যত-না আমি তাহার অন্তরের মধ্যে প্রবেশ করিতে পারিয়াছি—তাহা অপেক্ষা এই উচ্চাঙ্গের দুর্লভ সঙ্গীত (যাহা তাহার খাস জিনিষ) শ্রবণ করিয়া তাহার মনোভাবের একটু বেশি আভাস পাইয়াছি, সন্দেহ নাই।

 এক্ষণে তিনসহস্র ব্রাহ্মণ মহারাজের নিমন্ত্রিত অতিথি। উঁহারা উচ্চ-বর্ণের জন্য রক্ষিত সেই ঘেরের মধ্যে বাস করিতেছেন এবং উঁহাদের সমাগমে পবিত্র পূষ্করিণীগুলিও সমাচ্ছন্ন। উহারা চতুর্দ্দিকের গ্রামপল্লী ও অরণ্য-প্রদেশ হইতে আসিয়াছেন, ফলমূলশস্যাদি আহার করিয়া জীবনধারণ করেন, পার্থিববিষয়ের প্রতি বীতরাগ এবং রহস্যময় ধ্যানধারণায় দিবারাত্রি নিমগ্ন। একটা যজ্ঞানুষ্ঠানের জন্য উহারা এখানে সমবেত হইয়াছেন। এই যজ্ঞ পনর দিন ধরিয়া চলিবে এবং ইহা ছয় বৎসর অন্তর অনুষ্ঠিত হইয়া থাকে। পূর্ব্বকালে, কোন পার্শ্ববর্তী দেশ জয় করিবার জন্য যে যুদ্ধ হয় এবং যুদ্ধকালে ঐ ভূমিতে যে রক্তপাত হয়, তাহারি প্রায়শ্চিত্ত-স্বরূপ এই ব্রাহ্মণেরা সুদীর্ঘ প্রার্থনা মন্ত্রাদি পাঠ করিয়া থাকেন। অগণিত বৎসর অতীত হইয়াছে সত্য, কিন্তু তাহাতে কিছুই আসে যায় না। সেই রক্তপাতের প্রায়শ্চিত্তস্বরূপ এখনো ভগবানের নিকট উচ্চকণ্ঠে ক্ষমাপ্রার্থনা করিতে হইবে, তূরীভেরী বাজাইতে হইবে, পবিত্র শঙ্খধ্বনি করিতে হইবে। রাজচিহ্নস্বরূপ এই শঙ্খ, ত্রিবন্দ্রম-অধিপতির ছত্রচামরাদিতে অঙ্কিত।

 পাণ্ডবদিগের প্রতিমূর্ত্তি—ত্রিশফুট উচ্চ, মস্তকের উপর কিরণমণ্ডল বিরাজিত, ভীষণদর্শন; উহাদের রোষকযায়িত নেত্রের রুদ্রদৃষ্টি মানবগণের উপর নিপতিত। এই উৎসব উপলক্ষে, উহাদিগকে মন্দিরের গুপ্তকক্ষ হইতে বাহির করিয়া, রসারসি দিয়া, বহু আয়াসে মন্দিরের মুক্তপ্রাঙ্গণে—সুর্য্যালোকের মধ্যে টানিয়া আনা হইয়াছে। উদ্দেশ্য—যাহাতে সাধারণ লোকেরা উহাদিগকে দর্শন করিয়া ভীত হয়। ইহাদিগের নিকট যখন