পাতা:ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ - জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৭০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৬৬
ইংরাজ-বর্জিত ভারতবর্ষ।

প্রার্থনাদি হয়, তখন ব্রাহ্মণেরা স্বয়ং অন্তরের অন্তস্তল হইতে সেই অদৃশ্য অনির্বচনীয় পরব্রহ্মেরই আরাধনা করিয়া থাকেন। যজ্ঞোৎসবের এই পনর দিন, অসংখ্য অনুষ্ঠান, সাগ্রহ প্রার্থনা, ভয়-আনন্দের জীবন-উচ্ছাসে-ব্রাহ্মণ-গণ্ডির প্রাচীরাভ্যন্তরস্থ ভূমি তীব্ররূপে স্পন্দিত হইতে থাকে। দূরস্থ লোকদিগের তুমুল কোলাহলে আমি প্রপীড়িত হইতেছি—আকৃষ্টও হইতেছি। কিন্তু সেখানে আমার প্রবেশ একেবারেই নিষিদ্ধ;—মহারাজের অনুগ্রহ এস্থলে কিছুই করিতে পারে না;— সর্ব্বপ্রকার মানবচেষ্টা এখানে নিষ্ফল।

 যে বিশাল তালবনে এই নগরটি সমাচ্ছন্ন—সেই তালবনের মধ্যে যে সময়ে দীক্ষিত ব্রাহ্মণেরা যজ্ঞোৎসব করিতেছেন, সেই একই সময়ে, তাহারি অনুকরণে, মধ্যবর্তী ও নীচবর্ণের লোকেরাও নিজ নিজ গৃহে এই অনুষ্ঠানে ব্যাপৃত। আমার ন্যায় তাহারাও ব্রাহ্মণসংসর্গ হইতে বর্জিত। সেখানেও, চতুর্দিকে, সূর্যোদয় হইতে সূর্যাস্ত পর্যন্ত দেবতার নিকট এইরূপ অনুশোচনা ও ক্ষমাপ্রার্থনা চলিতেছে।

 যুদ্ধে-নিহত বীরপুরুষদিগকে যেখানে গোর দেওয়া হইয়াছে, সেই-সব সমাধিস্থানে-সেই-সব চৈত্যবৃক্ষতলে— এইরূপ পূজা-অর্চনা হইতেছে।

 রাত্রি হইবামাত্র, সেই বনের প্রত্যেক ছায়াচ্ছন্ন মার্গে, এবং যেখানে যেখানে সমাধিস্তম্ভ সমুখিত হইয়াছে এইরূপ প্রত্যেক চতুষ্পথে, ছোট- ছোট প্রদীপ জ্বালান’ হয়, বাদ্যোদ্যম হইতে থাকে, এবং বিবিধ নৈবেদ্য-সামগ্রী প্রদত্ত হয়। ক্ষুদ্র দেবালয় কিংবা সামান্য যজ্ঞবেদি-যাহা তক- অধিষ্ঠাত্রী নিকৃষ্ট দেবতাদিগের উদ্দেশে উৎসর্গীকৃত—সেখানেও সহস্র সহস্র ক্ষুদ্র কম্পমান অগ্নিশিখা জ্বলিতেছে। এখানে আমি অবাধে প্রবেশ করিতে পাইলাম। সহসা, পরস্পরসংশ্লিষ্ট তালবনের নিবিড় অন্ধকারের মধ্যে গিয়া পড়িলাম। যেখান হইতে, বাদ্যের শব্দ শোনা যাইতেছে