পাতা:ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ - জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৭১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ত্রিবন্ধুর রাজ্যে।
৬৭

আলো দেখা যাইতেছে, আমি সেই দিকেই আকৃষ্ট হইয়া, পথভ্রান্ত পথিকের ন্যায় ইতস্তত বিচরণ করিতে লাগিলাম।

 প্রথমেই একটি সামান্য ক্ষুদ্র দেবালয়;—বহুপুরাতন, লুপ্তমুখশ্রী-প্রস্তরস্তম্ভ-যুক্ত, অতীব নিম্ন, তরুপুঞ্জের পাদদেশে প্রতিষ্ঠিত; তরুগণ তাহাকে ছাড়াইয়া অতি ঊর্ধে অন্ধকারের মধ্যে মিলাইয়া গিয়াছে। দেবালয়টি ফুলের মালায় ও ফুলের অলঙ্কারে বিভূষিত। নারিকেলতৈলের ছোট ছোট দীপ চারিদিকে ঝুলিতেছে এবং তাহা হইতে যেন অসংখ্য জোনাকির আলো বিকীর্ণ হইতেছে। দুই তিনটি ক্ষুদ্র দালানের পশ্চাদ্ভাগে মন্দিরের বিগ্রহটি সমাধীন,—ভীষণদর্শন, মস্তকে উচ্চমুকুট, বহুবাহুবিশিষ্ট, মুখমণ্ডল শুকপক্ষীর ন্যায় হরিদ্বর্ণ। দেবালয়ের সুপরিচিত ও পবিত্র শাদা-শাদা ছাগশিশু চারিদিকে ঘুরিয়া বেড়াইতেছে। পুষ্পমালল্য বিভূষিত, অর্ধনগ্ন ভক্তের দল দ্বারের সম্মুখে ভিড় করিয়া হুড়াহুড়ি করিতেছে। শোকবিষাদময় তূরীরবে ও পবিত্র শঙ্খধ্বনিতে ঢাক-ঢোলের শব্দ ও বংশীধ্বনি আচ্ছন্ন হইয়া গিয়াছে।

 উহারা স্বাগত-স্মিতহাস্যে আমাকে অভ্যর্থনা করিল; তীব্রগন্ধি জুঁই-ফুলের মালা আমার কণ্ঠে পরাইয়া দিল। রাত্রির ‘গুমট্’-উত্তাপে, সুগন্ধি-রস-পাকের কটাহ-সমুথ্থিত ধূমের ন্যায়, এই জুঁইফুলের গন্ধ আমার, ‘মাথায় চড়িল'। তাহার পর লোক সরাইয়া আমার জন্য একটু জায়গা করা হইল। তালবনের চতুষ্পথবর্ত্তী শতবর্ষবয়স্ক একটি ডুমুরগাছের তলায় আমি দাড়াইলাম। প্রাচীনধরণের মস্তকহীন ক্ষুদ্রস্তম্ভ-পরিধৃত একটি প্রস্তরবেদীর চতুর্দিকে সমবেত লোকেরা আনন্দে উন্মত্ত হইয়া বাদ্য শ্রবণ করিতেছে। এখানেও দীপালোক, গোলাপ ও জুঁইফুলের মালা, ফলশস্যাদির নৈবেদ্য। পুরোহিতের মত একজন নীচবর্ণের লোক, মুখের রং কালো, খুব উচ্ছাসের সহিত মন্ত্রাদি পাঠ করিতেছে; আর মধ্যে মধ্যে ঢাক-ঢোল বাজিয়া উঠিতেছে। বৃক্ষসমূহের পশ্চাতে, ছায়ার