পাতা:ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ - জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৭৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ত্রিবঙ্কুর-রাজ্যে।
৬৯

ক্ষুদ্র হউক, যতই তাহারা অনুন্নত হউক, তাহাদের প্রার্থনাও তিনি শ্রবণ করেন।

 ভারতে, কাকের কা-কা-ধ্বনি যেন সমস্ত শব্দরাশির ভিত্তি-স্বরূপ। তাই, ক্রমে সেই ধ্বনি অভ্যস্ত হইয়া যায়—আর গ্রাহের মধ্যে আইসে না। মন্দিরের কোলাহল থামিয়া গেলে, পার্শ্ববর্তী কাকদিগের ভীষণ বৈতালিক সঙ্গীত যখন আরম্ভ হয়, আমি জাগ্রত হইয়া আর তাহা উপলব্ধি করিতে পারি না। আমার ছাদের সম্মুখেই একটা বৃহৎ বৃক্ষ,—সেই বৃক্ষশাখাই তাহাদের প্রিয় দাঁড়। সেই বৃহৎ তরুর গোলাপিরঙের কুসুমগুচ্ছ অনেকটা আমাদের Chestnut-তরুর পুষ্পের ন্যায়। অরুণোদয় পর্যন্ত ইহার শাখাগুলি এই কৃষ্ণবর্ণ বিহঙ্গদিগের ভারে বক্র হইয়া থাকে।

  আজ প্রাতে, সূর্যোদয়ে, যখন পল্লবপুঞ্জের তলদেশ-হরিৎ-শাখা- মণ্ডপের তলদেশ-নবভানুর কিরণচ্ছটায় উদ্ভাসিত হইল, আমি সেই সময়ে ব্রাহ্মণঘেরের মধ্যে মহারাণীর সহিত সাক্ষাৎ করিবার জন্য একটা গাড়িতে উঠিলাম।

 সিংহদ্বার পার হইয়া, প্রথমেই আবার সেই পবিত্র পুষ্করিণীগুলি দেখিতে পাইলাম। এই সব পুষ্করিণীর জলে ব্রাহ্মণেরা প্রতিদিন প্রভাতে অর্ধনিমজ্জিত হইয়া স্নান করে—পূজার্চ্চনা করে।

 এই প্রাচীরবেষ্টিত নগরের মধ্যে এইবার আমি পূর্ব্বাপেক্ষা অধিকদূর অগ্রসর হইয়াছি। এই নগরস্থ উদ্যানের মধ্যে, তালপুঞ্জের মধ্যে, শুধু যে রাজপরিবারেরই বাসস্থান, তাহা নহে; তা ছাড়া, রাস্তার দুধারে ছোট ছোট মাটির ঘর রহিয়াছে, তাহাতে শুধু উচ্চবর্ণের লোকেরা বাস করে। আয়তনয়না ব্রাহ্মণগৃহিণীরা, এই রমণীয় উসাকালে, নিজ নিজ গৃহের সম্মুখস্থ ভূমির শোভাসম্পাদনে প্রবৃত্ত হয়। সেই লাল মাটি উত্তমরূপে পিটাইয়া ও ঝাটাইয়া, একটা শাদা গুড়া দিয়া তাহার উপর নানাবিধ অদ্ভুত নকসা কাটিতে থাকে। কিন্তু এই নক্সাগুলি এত ক্ষণস্থায়ী যে,